সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

কুমারখালীতে তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।।বিডি নিউজ.ইন।।BDNews.in


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়া কুমারখালী ঐতিহ্য তাঁত শিল্পের শ্রমিকরা চরম দুর্দিনে মধ্যে রয়েছেন। তাঁত মালিকরা অর্থনৈতিক সঙ্কট, কাঁচামালের অভাব ও নানান প্রতিকূলতার কারণে জেলার এককালের প্রসিদ্ধ এই তাঁত শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক এখন বেকার হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

ক্রমাগত লোকসান, প্রয়োজনীয় পুঁজি, সুষ্ঠুনীতিমালার অভাব, চোরাই পথে আসা ভারতীয় কাপড়ে সয়লাব আর দফায় দফায় কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চরম দুর্দিনে রয়েছেন তাঁত শ্রমিকরা। এছাড়াও কাপড়ের রং, ক্যামিক্যাল ও সুতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাঁতের তৈরি কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। মেশিনের তৈরি নানাবিধ পণ্যসামগ্রী বাজারে আসায় দেশীয় তৈরি কাপড়ের চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। ফলে একরকম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন এ পেশার সাথে জড়িত শ্রমিকরা। জানা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি টাকুর-টুকুর শব্দে মুখর হয়ে থাকত যে তাঁত পল্লীগুলো। এখন আর সেখানে তাঁতের কর্মমুখরতা নেই।

কালের বিবর্তনে বর্তমানে সেখানে এখন নিঃশব্দের আবাদ। মাঝে মাঝে কয়েকটি তাঁত কল চললেও আগের মতো আর তাদের তাঁতে সুর ওঠেনা। ঠিকমতো সংসার চলে না। পেটের দায়ে পূর্বপুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সূত্র জানায়, তাঁত শিল্প নগরী খ্যাত কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা ও মিরপুর, পাংশা , লাঙ্গল বাঁধ উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক তাঁতী ছিল। এরমধ্যে খটখটি তাঁত ১৪ হাজার হস্তচালিত পিটলং তাঁত ৪৪ হাজার ও বিদ্যুৎ চালিত ২০ হাজার প্রতি বছর ২শ’ ৬০ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় তৈরি হত এ জেলায়।

২ কোটি ৮৮ লাখ পিস লুঙ্গি, ১৫ লাখ পিস বেডকভার, ৭২ লাখ পিস গামছা তোয়ালে উৎপাদন হত। এক সময় এ জেলায় বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক আয় ছিল ৩শ’ কোটি টাকার উপরে। দেশের মোটা কাপড়ের চাহিদার ৬৩ ভাগ পূরণ করতো কুষ্টিয়ার তাঁতীরা। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ তাঁত কাপড়ের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে এ চাহিদা কমে ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও আশানুরুপ তাঁতবস্ত্রের কোন দাম না বাড়ায় কুষ্টিয়ার ১ লাখ ১৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫০ হাজার তাঁত শ্রমিক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও পুরাতন পেশা হিসেবে এ পেশায় টিকে আছে কয়েক হাজার তাঁতী।

কয়েকজন তাঁতী জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ এ পেশার সাথে জড়িত আছেন তারা। তাই অনেকেই এ তাঁত শিল্পে এখনো টিকে আছে। এ কাজ করেই সংসার চলে কুমারখালীর তাঁতীদের । এই তাঁত শিল্প কে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কারিগরদের দিকে তাকাতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এ শিল্পে ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কমালে ও তাঁত বস্ত্র বিক্রির সমাধানে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাঁতীরা ফিরে পাবে তাদের হারানো ঐতিহ্য।

সরকারের কার্যকরী সহযোগীতা ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে আবারও ফিরে আসতে পারে তাদের সেই জাকজমকপূর্ণ ব্যবসা। বৃটিশ শাসনামল থেকে এসব এলাকায় তাঁত শিল্পের বিস্তৃতি লাভ করে। এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় প্রবীণ তাঁতী আশরাফ, সাহাবুদ্দি, শরিফসহ প্রমূখরা জানান, সর্বাধুনিক বস্ত্র শিল্পের বাজারে আমাদের তাঁতের তৈরি বাজারগুলো মার খাচ্ছে।

কেননা এই এলাকার তাঁতীরা হাতের সাহায্যে পণ্য তৈরি করেন। আমরাসহ হাজার হাজার তাঁতী পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িত। আধুনিক বস্ত্র শিল্পের বাজারে আমাদের তাঁতের তৈরি কাপড় গুলো প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছে না। কেননা এই এলাকার তাঁতীরা হাতের সাহায্যে পণ্য তৈরি করেন।

আধুনিক মেশিন কিনতে সরকার ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে তাঁতীদের পেশা বদল করতে হবে না বলে তাদের মত। তাহলেই রক্ষা পেত শত বছরের ঐতিহ্য এসকল গ্রামের ক্ষুদ্র কুটির তাঁত শিল্প।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ