সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

রকেট তৈরি করে তাক লাগালেন ময়মনসিংহের ২০ তরুণ শিক্ষার্থী।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন এবার সত্যি হতে চলছে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্বপ্নবাজ ২০ শিক্ষার্থীর হাত ধরে। টানা ৩ বছর গবেষণা করে বাংলাদেশে এই প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই গবেষক দলটি।

গবেষণার চূড়ান্ত ধাপ শেষ করে “ধূমকেতু” নামে ৪টি রকেট তৈরির পর রকেট উৎক্ষেপণে এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা। গবেষক দলটি জানায়, প্রাথমিকভাবে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা গেলেও পরবর্তীতে স্যাটেলাইটসহ মহাকাশ গবেষণায় কাজে লাগানো যাবে এই রকেট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন সম্ভব বলে মনে করে গবেষক দলটি।

২০ সদস্যের এ প্রকৌশলী দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ার কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল রহমান। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। এই প্রকৌশলীরা ২০১৯ সালে কাজ শুরু করে তিন বছরের গবেষণায় প্রাথমিক সফলতার চূড়ায় বলে দাবি করেছেন। আকাশে উৎক্ষেপণের জন্য প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়া ধূমকেতু-০.১ রকেটটি রাখা হয়েছে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মাঠে। অপেক্ষা শুধু সরকারের অনুমতি।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই বিমান ও রকেট তৈরির নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমানের। সেসময় এই স্বপ্নের ডানা না মেললেও ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে। সহপাঠী বন্ধু নিয়ামুল ইসলামের কাছে তার স্বপ্নের কথা জানান নাহিয়ান। এতে সায় দেন নিয়ামুলও। সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাইম, আশরাফসহ অনেকেই। শুরু হয় রকেট তৈরির গল্প।

তখন সময় ২০১২ সাল। এরপর তারা দেশ-বিদেশের পরিচিত বড় ভাই-বন্ধুদের কাছ থেকে রকেট সংক্রান্ত বই সংগ্রহ শুরু করেন। এভাবে তারা প্রায় চার শতাধিক বই গবেষণা করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু মাঝ পথে এসে টাকার অভাবে ছিটকে পড়েন তারা। তবে থেমে যাননি এই স্বপ্নবাজ তরুণরা।

এরপর ২০১৯ সালে ফের ব্যক্তিগতভাবে টাকা সংগ্রহ করে ২০ জনের দল নিয়ে শুরু হয় রকেট তৈরির কাজ। এভাবেই ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে তারা রকেট তৈরির কাজ শেষ করেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা ও অনুমতি। তবেই এই স্বপ্নের রকেট আকাশে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।

রকেট তৈরির ব্যাপারে দলনেতা নাহিয়ান বলেন, রকেটের জন্য প্রাথমিকভাবে তরল জ্বালানির ইঞ্জিন ডিজাইন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাভাবে ও করোনা মহামারির কারণে তরল অক্সিজেনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রজেক্ট চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে বিকল্প হিসেবে সলিড ফুয়েলের ৪০০ নিউটন ও ১৫০ নিউটন থ্রাস্টের দুটি ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয় এবং রকেটের আকৃতি কমানো হয়। বর্তমানে ৬ ফুটের দুটি ও ১০ ফুট উচ্চতার আরও দুটি প্রোটোটাইপ রকেট উৎক্ষেপণযোগ্য করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৫০ নিউটন ফোর্সের ৬ ফুট উচ্চতার দুটি রকেটের রেঞ্জ প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং ৪০০ নিউটন ফোর্সের ১০ ফুট উচ্চতার অন্য দুটি রকেটের রেঞ্জ প্রায় ৫০ কিলোমিটার।

তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে আছি। যেদিন সরকারের অনুমতি নিয়ে এই রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারব, সেদিন এই স্বপ্ন সফলতা পাবে। তবে স্বপ্ন শতভাগ স্বার্থক হবে যদি এই রকেট উৎক্ষেপণের পর সফল ভাবে ভূপৃষ্ঠে নামাতে পারি। এজন্য সরকারের সহযোগিতাটাই মুখ্য। সেই সঙ্গে বাংলার আকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা এই স্বপ্নের পূর্ণতা দেখতে চাই।

যে ল্যাবে টানা তিন বছর গবেষণা চলেছে, সেই ল্যাবটির নাম আলফা সায়েন্স ল্যাব। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংলগ্ন ওই ল্যাবে যাতায়াত ছিল ময়মনিসংহ সিটি করপোরেশনের কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর এম এ ওয়ারেছ বাবুর।

তিনি জানান, রকেটটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরকারি সহায়তা কামনা করে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সালাউদ্দিন জানান, অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমতি পেলে সেই চিঠি যাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই মূল। তবে আমরা আশা করছি দেশের স্বার্থে সরকার এই স্বপ্নবাজ তরুণদের পাশে দাঁড়াবে।

কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর কবীর বলেন, রকেট উদ্ভাবনের বিষয়টি দেশের জন্য আশা জাগানিয়া একটি বার্তা। তবে এখন এটি সফল উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। অনুমতি পেলে এর মাধ্যমে দেশে আবিষ্কারের নতুন অধ্যায় সূচিত হবে বলে মনে করি

কলেজ সূত্র জানায়, এর আগেও আলফা সায়েন্স ল্যাবের এই শিক্ষার্থীদের একাধিক রোবোটিক্স প্রজেক্ট সফল হয়েছে। তারা ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত টেকফেস্ট নির্বাচনী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে তারা ভারতের বিখ্যাত আইআইটিতে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানেও তারা শীর্ষ-৫ এ জায়গা করে সেমি ফাইনাল পর্যন্ত যায়।

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ