সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

হৃদয়ের মহাকাব্য - শিরিন শবনম।।BDNews.in

হৃদয়ের মহাকাব্য - শিরিন শবনম।

জগতে কত কী ঘটছে প্রতিদিন। প্রতিনিয়ত।‌ সৃষ্টির শুরু থেকে চলছে ধ্বংস যজ্ঞের মধ্যে সভ্যতার বদল বা বিকাশ।

কোভিডের অচলায়তন ভেঙে প্রযুক্তির ব্যবহার একলাফে অনেকটা পথ পাড়ি দিল। হোম অ্যাকসেসে অফিস বা ক্লাশ হয়তো এখনো আমরা স্বপ্নেও দেখতাম না।
লেটেস্ট সংযোজন পুতিনের ইউক্রেন। পুতিন যেন এই সময়ের মর্ডানিস্ট মহাকাব্যের এক হিরো।
কে কীভাবে নিবে আমি জানি না। সময়ের কাল বেয়ে বাহ্যিক পরিবর্তন আসে, সেই সাথে প্রজ্ঞার পরিবর্তনও জরুরি। সেই বিবেচনায় এই সময়ে এক আঙ্গিকে বাহ্যিক পরিবর্তনের নায়ক পুতিন আর অন্য আঙ্গিকে হারারী ঘরানার মানুষ, যারা হৃদয়ের অন্ধকার আলো জ্বেলে দূর করার প্রয়াসে লিখন যুদ্ধ করে। কাউকে আমি দেখিনি ইন্টারনেট ইমেজের বাইরে। গভীর উপলব্ধিতে তবু মনে হয় এরাই এই সময়ের নায়ক। এরা আমার ব্যক্তিমননেরও নায়ক। আমি যেন পুরাকালের সাবিত্রী হয়ে হয়ে এইকালের লাবণ্য থেকে নন্দিনী। সব যেন আমিই।
মনের দরজা কসমিক্যালি ওপেন করলে দেখা যায় অনেক অনেক সময়ের পরে মর্ডানানিস্ট সময়ে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের রণক্ষেত্রে পুতিন যেন শ্রী কৃষ্ণ। যে কিনা সময়ের পরিবর্তনের মোড়ক উন্মোচন করে। আমার কাছে হারারীও আর এক হিরো যে বোধে নাড়া দেয়। ভাবতে শিখায়। ভিন্ন সময়ে ভিন্ন আঙিকে রেভুলেশন তো বটেই। কথাটা হয়তো অবোধ্য। কিন্তু সময় এভাবেই পুনরাবৃত্তি করে ইতিহাসের।
ভাঙা এবং গড়া। আবার ভাঙা আবার গড়া। নিরন্তর এক প্রক্রিয়া।
পরিবর্তনের স্রোত। প্রতিটি মানুষ যখন নিজের ভিতরে একক তখন নিজের আয়নায় নিজেকেই নিজের জীবনের রেভুলেশনের সেই শ্রীকৃষ্ণ মনে হয়। অথবা লালন বা রবীন্দ্রনাথ - যারা অন্তর্জগতে, উপলব্ধিতে আলোড়ন তুলেছে। কেউ পার্থিব জগতের ধারা পাল্টিয়েছে, কেউ মনোজগতের স্তর পাল্টিয়েছে। আমি আমার নিজেকে পাল্টাতে চেষ্টা করে যাই প্রতিনিয়ত। পুরা যুগে আমিই হয়তো ছিলাম রাধা, সীতা বা সত্যবতী। ঘুরে ফিরে সব তো একই। শুধু খোলস বদল।
সময় পাল্টায়। ধরণ পাল্টায়। রূপ পাল্টায়। শুরু থেকে শেষ সবকিছু একই চক্রাকারেই ঘোরে। সৃষ্টির ‌শুরু থেকে প্রকৃতি এবং সময় এভাবেই চলছে। রূপ বদলের বাইরে নতুন কিছু সংযোজন নেই। সৃষ্টি-বিকাশ-ধ্বংস। আবার একই পুনরাবৃত্তি : সৃষ্টি-বিকাশ-ধ্বংস।
আমি থাকব না, তুমিও থাকবে না। আরেক আমি, আরেক তুমি আসবে। এভাবেই চলবে। পুরাকালের শ্রীকৃষ্ণ বা আধুনিক কালের পুতিন। সবই একসময় বর্তমান থাকে। সবই একসময় বিগত হয়। কালের চক্রে একসময় সবই মিথ। সময়ের পরিবর্তনটা শুধু চলমান। সেই পরিবর্তনের সাথে বোধগত পরিবর্তন জরুরি। নাহলে আধুনিক সময়কে ধরা যায় না। ব্যক্তিমন্যতায় নিজের জীবনকালকে ধারণ জরুরি। একটি জীবন না হয় হয়তো অকারণেই অপচয় হয়ে যায়।
জগৎ পরিবর্তনের নায়করা অপেক্ষা করে না। সময়ের প্রয়োজনে সময়কে তুলে আনে। সৃষ্টি করে নেয়। সভ্যতার হীরোরা ব্যক্তিমন্য জীবনের সীমারেখাকে এঁকে দেয় পার্থিব সময়ের অতিভুজে, না চাইলেও। আর তাই ইলিয়াড, মহাভারত, শাহনামা, প্যারাডাইজ লস্ট, সাবেত্রী, গিলগামেস এর মত মহাকাব্য রচিত হয়েছিল। আবার এক নতুন মহাকাব্য হয়তো রচিত হতে যাচ্ছে মর্ডান উপাত্তে। ডিজিটাল ফর্মে।
মনোজগত বাইরের কেউ এসে পাল্টে দিতে পারে না। নিজেকেই নিতে হয় সেই দায়িত্ব সময়ের অতিভূজে। ক্ষুদ্র এক প্রাণ আমি নিজেকে নিয়ে বাঁচি। নিজেকে নিয়ে মরি। নিজের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। পৃথিবীর কিছুই পাল্টানোর শক্তি আমার নেই। বড় বড় বিষয় তাই ভাবতে যাই না। আমার বাঁচা মরায় পৃথিবীর কিছু বদল হবে না। ছোট্ট একটি বৃত্তের ক্ষুদ্র এক মানুষ আমি যার নিজের আয়না ছাড়া আর কিছু নেই। সেই আয়নায় একান্তে নিজেকে দেখি। নিজের ভিতরাত্মার আওয়াজ শোনার চেষ্টা করি। বোঝার চেষ্টা করে যাই নিরন্তর নিজেকে। নিজের হৃদয়ের সমুদ্রে ভেসে উঠি, ডুবে যাই, ডুবসাঁতারে পার করি বেলা। এইভাবেই নিজের হৃদয়ে নিজের বোধের কিছু শব্দমালার অনন্য হার গলায় পরি।
এই বিরাট বিশ্বসংসারের হাজারো ডামাডোল বা কীর্তন আমার মন কাড়ে না। শব্দগাথায় তৈরি আমার টায়রা, আমার টিকলি আমার সাথে কথা বলে। আমি হই নিজের মনের রাজকন্যা। এই আমার সুখ। এই আমার দুঃখ। এই আমার দিনযাপনের গান।
লাভ, লোভ, নাম, মোহ, অর্থ, বিত্ত, ভয়, নিন্দা কিছু কেয়ার করি না। হৃদয়ে জ্বলে এক আশ্চর্য দ্যূতি - শুদ্ধতার। হৃদয় কেবল চায় প্রশান্তি। হৃদয়ে বাস ভালবাসার এক জলভরা দিঘী। আপন মনের এক রাজকন্যা আমি। মেঘের ডানায় ভর করে এ রাজ্য ও রাজ্য ছোটাছুটি করি।
শরীরের আবেদন মানুষের অস্তিত্বের উপরিভাগে থাকে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা জাগতিক চাওয়া সব শরীরের চাহিদা। শরীরের পথ বেয়ে অস্থি-মজ্জার পথ পেরিয়ে অন্দরে থাকে এক মন। সেই মনের গহীনে অজেয় এক হৃদয়। আমি সেই হৃদয়ের পথ চলি। নশ্বর অস্তিত্ব একদিন ধুলায় মিশবে। আত্মা থেকে আত্মা বাহিত হয়ে হৃদয়ের কথা রয়ে যাবে কালের অবিনশ্বর জাবেদায়। হৃদয়ের চেয়ে, মনের চেয়ে বেশি দামি, বেশি ভারি, বেশি ব্যাপ্ত আর কী আছে এই মহাজগতে?
পুতিনের মতো বিশ্বরাজনীতির নায়কেরা বিশ্বের ভার্চুয়াল ম্যাপ পরিবর্তন করছে। হারারীর মতো মানুষেরা লিখনী দিয়ে অন্ধকারে বাস করা মানুষদের টেনে তুলছে আলোর জগতে।
প্রতিটি মানুষের জীবনই এক একটি মহাকাব্য।
তৃণসম ক্ষুদ্র এক মানুষ আমি। এই বিশ্বসংসারে যার কোনো ভূমিকা নেই। তবু আমি দর্শক। এক মনযোগী দর্শক। যুগ পাল্টানো, সমাজ পাল্টানো নায়কদের প্রতি অন্তরে ভালোবাসার ফল্গুধারা নিয়ে অন্তরে আমি পুরাকালের সাবিত্রী থেকে একালের লাবণ্য থেকে নন্দিনী হয়ে যাই। আমার হৃদয় আমার নিজের কাছে এক মহাকাব্য। হৃদয়ের আঁচল দিয়ে সব অসুন্দর আড়াল রাখি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অত্যন্ত কঠিন বিষয়ের সহজ আলোচনা! ভাবায়। সত্যি কি সত্তাটা এই 'আমি'ই কাল পুরাকাল অতিক্রম করে? আবেগগুলো এক হয় কী করে নাহলে?

    উত্তরমুছুন