তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক এবং বিজ্ঞানী। একজন প্রচার বিমুখ এই লেখক, ২শতর উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন। গান লিখেছেন ৪হাজার এর উপর। পুরস্কার পেয়েছেন প্রায় শতাধিক। উপাধি পেয়েছেন প্রায় ২০টি। তাঁর পিতা কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান- ভাষা সৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। যিনি ছিলেন নির্লোভী নিঃশার্থ বড় মাপের ত্যাগী দেশপ্রেমিক, রাজনীতিবিদ।
বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ও ভিনদেশি শাসন শোষণ তথা শত্রু মুক্ত করতে সার্বিকভাবে লড়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, জেলও খেটেছেন। বঙ্গবন্ধুর এমন প্রিয়জন ও কাছের ছিলেন যে চীনসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সফরসঙ্গী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাকেই রেখেছেন। এদিকে সৈয়দা রাশিদা বারী সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত, তবে তিনি আপাদ মস্তকে সাহিত্য সংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব, সাহিত্য সংস্কৃতিসেবী, উদার মনের প্রগতিশীল সমাজ সেবক।
বাংলাদেশ প্রেমিক, বাংলাভাষা প্রেমিক, বাবার শিক্ষায় দীক্ষিত। সমাজ বিনির্মাণে যার লেখনী ১০০ভাগ নিখুঁত এবং নিরোপেক্ষ। তার লেখনিই আমাদেরকে একটি সভ্য, সত্য, সুন্দর, সৃজনশীল সমাজ তথা দেশ গড়ার পথ দেখায়। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য, নীতি নাট্য, দেশ, জাতির, কল্যাণকর তথ্য সমৃদ্ধ করেন ও মন্দ কাজে প্রতিবাদ ব্যক্ত করে থাকেন। এটা কোন স্বার্থের জন্য নয়, সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থে নিঃশর্তে। সৈয়দা রাশিদা বারী এ সকল ভালো কর্মকান্ডের জন্য প্রশংসিত।
এই গুনী মানুষটি এ যাবৎ ছোট থেকে মাঝারী তথা বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ ২শতর উপর গ্রন্থ রচনা করেলেও প্রকাশিত হয়েছে ১শতটিরও উপরে। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য অন্তত ৮০-৯০টি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়, কাজ চলছে। যা তিনি এক সংঙ্গেই দিতে চান এবং কারণ বর্ণণায় অনেক ব্যাপার আছে বলে জানিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি ৪হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। তবে শুধু সৈয়দা রাশিদা বারীই নয়, এ যাবতকাল বেশী রচনাশীল কোন গীতিকারই জীবদ্দশায় তার নিজের রচিত সব গান প্রকাশ করেন নাই।
যারা বিপুল লেখেন তাদের পক্ষে এটা সম্ভব না। লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, প্রভৃতি গীতিকারের গান, পরবর্তী পুরুষ, ভক্ত, উত্তরসূরী সরকারী উদ্যোগ ও বেসরকারী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশ করেছে, এমনকি এখনও যা অব্যাহত আছে। তাদের অপ্রকাশিত অন্যান্য পান্ডুলিপিও ছিলো। যা পরবর্তীতে প্রকাশ হয়েছে ও হচ্ছে।
তিনি তার লেখা বেশিরভাগ বই কুষ্টিয়ার বাসাই লিখেছেন। ভাঁঙ্গা টেবিল ও চেয়ারে এখনো তিনি লিখে চলেছেন বই। অসংরক্ষিত রয়েছে তার লেখা অসংখ্য বই, এখনো পর্যন্ত। পূর্বেও একটি ঘরের টিন দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তার অসংখ্য প্রকাশিত গ্রন্থ তবে সংরক্ষিত, অসংখ্য পত্র পত্রিকার সংরক্ষিত কপি, অসংখ্য অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি, নাটক, উপন্যাস, গল্প, কবিতা ইত্যাদি যা বৃষ্টিতে ভিজে ও উই পোকায় খেয়ে নষ্ট করছে রীতি মতো।
এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার নিজ প্রচেষ্টায় সংরক্ষিত কিছু প্যাকেট। তার নিজ উদ্যোগে সংরক্ষিত রচনা গ্রন্থ ও পত্র পত্রিকা বাঁচাতে জোর অগ্রগতি প্রয়োজন। কিন্তু সেটা অনেক খরচের বিষয়। যদিও এই সমাজে এমন মেয়ে লেখক খুব কমই আছে। আমার তো মনে হয় এতো অবদান অন্য কোনো মেয়ে লেখকের নেই।
তাই তো তার এই সব কারিকুলাম ভালো ভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজন দেশ সমাজ ও নারী উন্নয়ন অগ্রগতির স্বার্থে। বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর মোশারফ হোসেনের সকল গ্রন্থ সংরক্ষিত নাই। গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু গ্রন্থ ছিলো, যা এখন আর আমরা পায় না। এভাবে সমসাময়িক সময়ে হিংসা পরশ্রীকাতরতায় সংরক্ষণে অবহেলার জন্য। কিন্তু মীর মোশাররফ হোসেন ঠিকই লিখেছিলেন। ব্যাপক লেখালেখি থাকা, লেখালেখিতে ব্যাপক অবদান রাখা, তাদের উপরে আসলে সমাজের মানুষদেরও সুদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন হিংসা বিদ্বেষ ভুলে। হিংসা বিদ্বেষ অহংকার দূরে ঠেলে, লেখক বেঁচে থাকতেই লেখকের থেকে, লেখকের সমস্ত রচনা বুঝে নিয়ে সংরক্ষনের ভালো ব্যবস্থা করা অতি জরুরি।
এই ব্যাপারে দেশ এবং সমাজের মানুষের দায়িত্বের সাথে সরকারেরও অবদান থাকা উচিত এই ধরনের দেশের ঐতিহ্য রক্ষনাবেক্ষনে। সময় গেলে যেমন সাধন হবে না, তেমন সাহিত্য কারিকুলামের ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ক্ষতি পূরণ হয় না। কবি সৈয়দা রাশিদা বারীর সাথে কথা বললে- তিনি এই কথা আমাকে শুনালেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে, এ কথাই অকপটে ব্যক্ত করলেন আর কি? আসলে তিনি যদি এতো অর্জন দেশ ও দেশের মানুষকে দিতে পারলেন, উপহার হিসেবে পৃথিবীকে দিতে পারলেন। সমাজ দেশ ও পৃথিবীর মানুষের কি সেসব রক্ষায় কোনই দায়িত্ব থাকবে না!! তার এতো এতো সব অবদানের এবং সেই সমস্ত অবদান রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সার্বিক পর্যায়ের মানুষের ধর্ম মত নির্বিশেষে আন্তরিকতা থাকা জরুর প্রয়োজন।
আমার তো মনেই হয়, মৃত্যুর পরে নয়, এই ধরনের মানুষের জন্য তার জীবদ্দশায়, সে নিজেই যেন দেখে যেতে পারেন- চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন- এমন কর্মতৎপরতা এই ডিজিটাল যুগের বৈশিষ্ট্য হওয়া দরকার। তাই আমি আমার দিক থেকে বলছি, এই জীবন্ত কিংবদন্তী বেঁচে থাকতে তার সমস্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকার কপি, নানা কারিকুলাম, অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি, প্রাপ্তিত ক্রেস্ট পুরস্কার গুলো ও উপাধি গুলোর অরজিনাল সার্টিফিকেট, সব কিছুরই সংরক্ষণে, ঝুঁকি মুক্ত করার প্রদক্ষেপ নেওয়া জরুরী প্রয়োজন এবং সেটা নেওয়া হোক। আমি এবং আমার BDnews এর পক্ষ থেকে কামনা করছি একটি লাইব্রেরীতে সৈয়দা রাশিদা বারীর সকল অর্জন সমূহ, এবং তার সৃষ্টি ও রচনা সমূহ, সুন্দর রুপে সরকারি ভাবে সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হোক।
0 মন্তব্যসমূহ