সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

বিষাক্ত পলিথিন বর্জ্যের দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর’ এ ব্যাপারে কম-বেশি সবারই জানা। তবে আমরা এ ব্যাপারে এখনও পুরোপুরি সচেতন নয়। পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার দুই দশকে এখনও পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধ হয়নি। প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার কিংবা পলিথিনের বিকল্প তৈরিতে নেই কোনো উদ্যোগ।

সরকার পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বললেও, দেশের পাটকলগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ পাটের ব্যাগ ব্যবহারে দিনদিন উৎসাহ হারাচ্ছে। অন্যদিকে দামে সস্তা ও ব্যবহারে সহজলভ্যতার কারণে পলিথিন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমছে না। নগরবাসীর অসচেতনতায় ভয়ংকর পরিণতির পথে এগোচ্ছে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ।

গবেষকদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ। প্লাস্টিকের ব্যাগ মাটিতে মিশে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ হাজার বছর। তাই এর পরিত্যক্ত অংশ দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। মাটির উর্বরতা হ্রাস ও গুণাগুণ পরিবর্তন করে। কৃষিক্ষেত্রে পলিথিন সূর্যের আলো ফসলের গোড়ায় পৌঁছাতে বাধা দেয়।

ফলে মাটির ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া না মারা যাওয়ায় জমিতে উৎপাদন কমছে। রাজধানীর খাল-নর্দমা পরিষ্কার করে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় প্লাস্টিকের বোতল। আর এ কারণেই বর্ষা এলেই রাজধানী জুড়ে জলজট তৈরি হয়। ব্যবহারের পর এসব জিনিস বিভিন্ন জলাশয়ে ও যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় পরবর্তী সময়ে তা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে।

সেখান থেকে জলজ প্রাণী তা গ্রহণ করছে। এসব প্রাণীর মাধ্যমে তা আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। ফলে দিনদিন তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিফিনাইল ক্লোরাইড পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাস দূষিত করে। মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এরপর ও থেমে নেই পলিথিনের রমরমা ব্যবসা এবং নৈমিত্তিক ব্যবহার। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই বাড়ছে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার।

ক্ষুদ্র একটি জিনিস থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন বিক্রেতারা পলিথিনের ব্যাগে করেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। শুধু পরিবেশ নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে চর্মরোগ ও ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে পলিথিন ব্যাগকে চর্মরোগের এজেন্ট বলা হয়। এ ছাড়া পলিথিনে মাছ, মাংস মুড়িয়ে রাখলে এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়। পলিথিনের ব্যবহার সাগরে থাকা প্রাণ বা পরিবেশকেই শুধু হুমকিতে ফেলছে না, এটা মানবদেহের হরমোনের কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করে।

পলিথিন বন্ধ্যত্বসহ গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণ নষ্ট এবং কিডনি বিকল করে দিতে পারে। অতিমাত্রায় পলিথিন ব্যবহারের কারণে ক্যানসারসহ নানা রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধছে মানুষের শরীরে। এ ছাড়া রঙিন পলিথিন জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। এ থেকে নির্গত ক্যাডমিয়াম শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসৃত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়া পলিথিনের প্রভাবে মানুষের প্রজনন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আইন অনুযায়ী ক্ষতিকর পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে চট ও কাগজের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পলিথিনের ক্ষতিকর দিক থেকে আগামী প্রজš§কে রক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, সোচ্চার হতে হবে। পলিথিনবিরোধী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই আমরা ক্ষতিকর পলিথিনের কবল থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারব। সর্বনাশা পলিথিনের দূষণ থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদের প্রিয় পৃথিবীকে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতনতার বিকল্প নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ