সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

একজন বঙ্গবন্ধু ও তার প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ই জানুয়ারি-সৈয়দা রাশিদা বারী।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ শত বছরের প্রত্যাশিত দেশ ভালোবাসার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি জীবদ্দশায় ৪৬৮২দিন কারাগারে ছিলেন অর্থাৎ ১৪টি বছর কারাগারে ছিলেন। ১৯৩৮সালে সর্বপ্রথম স্কুল জীবনে ৭দিন। তারপর পাকিস্তানের ২৩বছরের শাসনকালে ১৮বার জেলে গেছেন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন ২বার।

তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাপঞ্জি বর্ণনা করেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কারাগারে থাকাকালে তিনি তাঁর এই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ রচনা করেছেন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ১৯৩৮ সালে প্রথমবার কারাগারে যান তিনি। ওই সময় ৭ দিন  কারাগারে ছিলেন। এরপর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি ৫ দিন কারাভোগ করেন। একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর কারাগারে গিয়ে তিনি মুক্তিপান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারা ভোগ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবারও কারাগারে গিয়ে ৮০ দিন কারা ভোগ করে মুক্তি পান ওই বছরের ২৮ জুন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আবারও ২৭ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারির টানা ৭৮৭ দিন বঙ্গবন্ধু কারা ভোগ করেন। এই ১৯৫০সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি তার কারাগারবস্থার মধ্যেই জোড়ালো ভাষা আন্দোলন চলে। কিন্তু তিনি কারাগারে অবস্থান থেকেই  নেত্রীত্ব দিয়েছিলেন।

নেতৃত্ব দেওয়া সেই বার্তাবাহকের প্রধান, ভাষাসৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে সৈয়দ জালাল উদ্দিন ওয়াহেদ আলী। এই যে এই পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জেলে যাওয়ার মধ্যে, এই রফিকুল ১৯৪৮ সাল হতে বঙ্গবন্ধুর ৫বার জেলে যাওয়ার মধ্যে- ভাষা আন্দোলনের জেলে যাওয়া ধরে রফিকুলও ২বার জেলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ৪বার জেলে যাওয়ার মধ্যে রফিকুল আরো একবার জেলে যান। এর মধ্যে ১বার বঙ্গবন্ধুর সাথে ধরা পড়লে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের দুজনকে জেলের একই রুমের মধ্যে আটকিয়ে রেখেছিল। যাকে শেখ মুজিব, ব্রিলিয়ান্টবয়, (১৯৪৮ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ফার্স্ট ডিভিশন মেট্রিকুলেশন পাস করায়) পিচ্চি বন্ধু, (দেখতে শরীর স্বাস্থ্যে এবং বয়সে ছোট থাকাই) রবীন্দ্র সংগীত, (স্বদেশীয় প্রেমের রবীন্দ্র সংগীত শুনাতেন বিধায়) বলে আদর স্নেহ করে ডাকতেন।

শেখ মুজিবকে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও কারাগারে যেতে হয়। এ দফায় ২০৬ দিন কারা ভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারির পর ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হন। এ সময়ে একটানা ১১৫৩ দিন তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। এ দফায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় একটানা সব চেয়ে বেশি, ৩ বছরের বেশি, কারাগারে কাটান এদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি আবারও গ্রেফতার হয়ে ঐ বছরে ১৮ জুন মুক্তি পান। এ দফায় তিনি কারাভোগ করেন ১৫৮ দিন। এরপর ১৯৬৪ ও ’৬৫ সালে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। মুক্তির সনদ ৬ দফা দেওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে গেলে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন তিনি।

এরপর ১৯৬৬ সালের ৮ মে আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২২ ফেব্রæয়ারি মুক্তি পান। এ সময় তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০২১ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭মার্চ তিনি তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন প্রিয় গণমানুষের উদ্দেশ্যে। যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রæর মেকাবেলা দিতে। ২৫মার্চ মধ্যরাতে আণুমানিক রাত ১২টার পর ১টার পূর্বে, পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।

এরপর তাঁকে স্থানান্তর করা হয় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানালি কারাগারের একটি জেলে। জীবনে মোট ১২ বার জেলে যাওয়ার মধ্যে এটায় ছিল তার শেষ কারাবন্দি হওয়া বা কারাগারে থাকা। তিনি কারাভোগ করেন মুক্তিযুদ্ধের ৯মাস বা ২৮৮ দিন। ১৯৭২ সালের ৮জানুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনতা ও শান্তিকামী মানুষও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠলে।

হ্যাঁ এভাবেই আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নত স্বীকার করে অবশেষে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করে। আর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু সোজা লন্ডন ও ভারতের নয়াদিল্লী হয়ে ১০জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১মিনিট স্বাধীন স্বদেশের বুকে, বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এই ১০ জানুয়ারিকেই বলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস। এই দিনেই বঙ্গবন্ধু এক সাগর জনসমুদ্রে ডুবে বা তাদের ভালোবাসার সাগরে স্নাত হয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাসন দেন। যথা সম্মতিক্রমে সকলের প্রাণের মানুষ বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রায় ২শত বছর ব্রিটিশ, ২৩বছর পাকিস্তান, শাসন শোষণ করা দেশের দায়িত্ব হাল ধরলেও অল্প সময়ে এমন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের কষ্ট লাঘব বা স্থিতিশীল হয় না। এটা খুবই স্বাভাবিক যে তা সম্ভবও না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু মানুষ সেটা না বুঝে বরং ভুল বোঝে। যার ফলে মানুষকে সুখি করতে না পারায়, শত্রুচক্র তার জীবনাষান ঘটায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। এই হল আনন্দ-বেদনায় মোরা, দুঃখ কষ্টে ঘেরা, তিল তিল করে অর্জন করা বাংলাদেশের ইতিহাস।


লেখক: সৈয়দা রাশিদা বারী

কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ