সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

পাবলিক বাসে নারীদের নিরাপত্তা কেনো প্রয়োজন-সৈয়দা রাশিদা বারী।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ যুগে যুগে সমাজে মেয়েদের নিচু বা অবহেলার চোখে দেখা হয়। সেই চিরাচরিত নিয়মানুসারে বাসের ড্রাইভারের বাম সাইডে, সামান্য গুটিকয় আড়া-আড়ি সিট বাসের মধ্যে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ আছে। স্থায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে, যা মেয়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির। আবার উঁচু মতো সেখানে উঠাও ঝুঁকির, বৃদ্ধা হলে, সন্তান সম্ভবা মহিলা হলে- বা যেকোন মেয়েদের জন্য। তাই এটা একটা অমানবিক। যেখানে সিট মেয়েদের জন্য এক তৃতীয়াংশ ভাগ থাকা জরুরী। সংসারের ধকল  সামলিয়েও এখন মেয়েরা কেউ ঘরে বসে নেই। 

সরকারী, বেসরকারী, এন.জিও, সায়িত্ত¡ শাসিত অন্যান্য নানান সংস্থা যেমন: ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শাখা প্রশাখা, ইউনিভার্সিটি,  ব্যক্তিগত অফিস, প্রিণ্ট, পাবলিকেশন্স এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী, গ্রæপ কোম্পানী, বায়িং হাউজ, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, হাসপাতাল, ইঞ্জনিয়ারিং বা আর্কিটেক ফার্ম, সাহিত্য সংস্কৃতিক একাডেমী, অভিনয় জগত প্রভৃতিতে মেয়েদের প্রাধান্য তুলনামূলক বেশি। 

গত বছরেও রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অফিসার, সিনিয়র অফিসার বা কর্মচারী পর্যায়ে পুরুষের চেয়ে মেয়েদেরই বেশি নিয়োগ দিয়েছে। কেজি নার্সারী থেকে সরকারী প্রাথমিক, মাধ্যমিক, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষক অনেক বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের হারে মেয়েরা কম নয়। রাস্তা ঘাট মেরামত, ইট সুরকি ভাঙা, বড় বড় বিল্ডিং এর কাজে আজকাল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের অবস্থান কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এভাবে পথের ধারে পিঠা বানানো থেকে কাঁচা তরকারির হাটে, মাছ মাংসের বাজাওে তাদেও পদচারণা আছে। 

পান-সিগারেটের দোকানে, মার্কেটগুলোতে মার্কেটের মুনিব হওয়া, মালিক হওয়া,  দোকানী হওয়া, বই বিক্রি করা বা প্রকাশক পর্যায়ে অনেক কিছুরই পরিচালনার ভূমিকায় মেয়েরা বেশ জোট বেঁধে ব্যবসা বাণিজ্য সামলাচ্ছে। মালিক পর্যায় থেকে বেচা-কেনার কাজ লাজ ভয় দ্বিধা মুক্তভাবে করছে। 

রাজনৈতিক আঙিনায় মেয়ে কর্মি কম নেই। গত ৩০ উর্ধ্ব বছর একাধারে প্রধানমন্ত্রীর আসনে নারীই রয়েছেন। ১৯৯১ হতে ২০২৪ইং ৩৩বছরে পড়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২বছর ছিল তত্তাবধায়ক সরকার। নারী এমপি, মন্ত্রীর সংখ্যাও কম নয়। 

গার্মেন্টেস এর শ্রমিক কর্মী মেয়েরা নি:সন্দেহে সিংহভাগ। তাহলে কেন বাসে মেয়েদের জন্য মাত্র ৬/৯টি সিট বরাদ্দ হবে? তাও ড্রাইভারের ওদিকের আড়াআড়ি সিটে। ঝুঁকি নিয়ে যেখানে বসেও থাকতে হবে হেলান না দিয়ে! আর দেখা যাচ্ছে হেলান দিয়ে ইয়াং ছেলেগুলো ঘুমাচ্ছে! ছেলেরা বাড়িতেও সুখ করে, বাইরে বাসের মধ্যেও ঘুমাই। 

মেয়েরা বাড়ি ও রান্নাবান্না ইত্যাদির ধকল সামলিয়ে আসেন। এসে বাসের মধ্যেও হেলান না দিয়ে, না ঘুমিয়ে, সারাপথ সজাগ থাকেন। আসলে বললে ভুল হবে না, পুরুষের জমি জায়গা বেশি নেওয়া ও বেশি সুখ করতে করতে লোভ হয়ে গেছে, তাই এমন বেআক্কেল স্বভাব। প্রকৃতই মেয়েদের এক তৃতীয়াংশ সিট এবং লম্বালম্বি চেয়ার সিট হলে দেশ এবং সমাজের জন্য মঙ্গলজনক।  শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদন্ড, সংসারের মেরুদন্ডও ঘরের মা, বউ, কন্যা, জায়া, ভগ্নি। 

তারা অসুস্থ থাকলে সংসারে কোনদিনও উন্নতি হবেনা। চিরজীবন অশান্তির আগুনে তিল তিল করে পুড়ে ছায় হতে হয়। অন্তর জ্বালায় জ্বলে, চাকুরিজীবি যোগ্য পুরুষ হলেও। সন্তানেরা অসুস্থ মাকে নিয়ে ভোগে। নচেৎ অসুস্থ ভাবীকে নিয়ে দেবর, ননদ, ভাসে, কাঁদে। অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে বাবা মা, চাচা, ফপু অস্বস্থিতে সময় পাড় করে ইত্যাদি। আয় রোজগারের অর্থ বেশির ভাগ চিকিৎসা পথে ব্যয় হয় ইত্যাদি। 

কাজেই সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সতর্ক হলে ক্ষতি কি? ক্ষতি তো নাই। শুধু লাগবে মেয়েদের সাথে ছেলেদের একটু সহানুভূতি- সহমর্মিতা-সহযোগিতা। এতে সুখে থাকে সংসারের সবাই মিলে- মহাশান্তিতে। 

এটা নিশ্চয় অজানা নয় যে, মেয়েদের শুধু শরীরই নয়, মেরুদন্ড এবং কোমর ছেলেদের তুলনায় দূর্বল ও নরম। তাদের হাড়গুলোও চিকন। তারা যখন মা হয় মেরুদন্ডের হাড় সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ এই চিকন হাড়ের উপর একাধারে বাচ্চার ওয়েটকে ধারণ করতে হয়। তারপর এদিকে বাসের মধ্যেও আড়াআড়ি সিটে বসলে মেয়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। সমস্ত চাপ এবং ঝুঁকি কোমরের বা মেরুদন্ডের হাড়ের ওপর ভর করা থেকে প্রথম এই মেরুদন্ডের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি হয়। যা একবার হলে কোনদিনও পুরাপুরি সারেনা-ঠিক ডায়াবেটিস প্রেশার যেমন- মরণব্যধি সারা জীবনের ঘাতক, তেমন হয়েই দাঁড়ায়। 

তখন সারাজীবন তার ঐ সিটে না বসা ছাড়াও বহু নীতি মালা-মেনে চলতে হয়! না মানলে সেটা হয় তার জন্য ভয়াবহ। কাজেই আগে থেকে সাবধান থাকলে মেয়েরা এ রোগের ঝুঁকি হতে পরিত্রাণ পেতে পারে। সেটা ভ্রমন কালে সাধারণ ইজি সিটে বসলে ওয়েস্টের ওপরে চাপ পড়ে কম। তখন ততটা পরিমাণে ক্ষতি করতে পারে না। যাবত জীবন ভিটামিন-ক্যলসিয়াম ট্যাবলেট খেয়েÑবাঁধা নিয়মে চলার চেয়ে, সাবধান থেকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জীবন পাওয়া নিশ্চয়ই বহুগুণে সবারই ভাল। 

পৃথিবীতে নারী পুরুষ আল্লাহর আমানত। প্রকৃতির মেল বন্ধনে সেই আমানতের খেয়ানত না হওয়া মানেই সমাজে সকলেই ভালো থাকা।  কিন্তু পূর্বেও যা বলেছি পুরুষ যদি নারীর কনসিডার না করে, সেটা মেলানো কখনো সম্ভব না। 

তাই আসুন আমরা এবার ২০২৪ সালে ভাষার মাসের সম্মানার্থে এই ভালো কাজটা প্রতিষ্ঠা করি। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনেয় পুরুষ উঠবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ