সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

বাংলাদেশী একজন সফল নারী উদ্যোক্তার পথচলার গল্প।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ আমাদের সমাজ এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়। 'নারী-পুরুষ সমান অধিকার ' ট্যাগলাইন হাতে নিয়ে এখনো নারীদের হাঁটতে হয় তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাতাকলে বহু নারীই নিজেকে গুঁটিয়ে নেন এক কোণে। কিন্তু কেউ কেউ আবার শত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে সোচ্চার হন অধিকার আদায়ে, ছিনিয়ে আনেন সফলতা নামের সোনার হরিণ। তেমনি এক লড়াকু নারী অপরাজিতা মিতি নেওয়াজ। বর্তমানে বাংলাদেশের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। 

আমি কানিজা আক্তার মিতি ওরফে মিতি নেওয়াজ। আমার বেড়ে ওঠা রংপুর শহরে। বাবা, মা ও দুইবোন এক ভাই নিয়ে আমাদের পরিবার। যদিও আমার ভাইটির দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু ঘটে। আমার বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। আমার হাতেখড়ি রংপুর শিশু নিকেতন স্কুলে। 

তারপর রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে স্কুল এবং  রংপুর সরকারি কলেজ হয়ে কারমাইকেল কলেজ থেকে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি। কলেজ জীবন থেকেই নিজে ডিজাইন করে ড্রেস এবং শাড়ি বানাতাম। বিভিন্ন ধরনের পোশাক ডিজাইন করা আমার নেশা হিসেবে ছিল, এটি সেই ২০০৬-০৭ এর কথা।

প্রথমদিকে শুধুই নিজের জন্য ড্রেস তৈরি করে পড়তাম। পরবর্তীতে আমার কাজগুলো দেখে কাছের মানুষদের পছন্দ তৈরি হতে থাকে এবং বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে  তাদের জন্য ড্রেস  বানিয়ে দিতে হতো আমার। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার ধ্যান-ধারণা ছিল ব্যবসাভিত্তিক। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার, নয়টা পাঁচটা চাকরি করার ইচ্ছা ছিল না কখনোই। 

২০১৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। এরপর থেকে লাগাতার স্বামী সংসার সামলাতে সামলাতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আমি আমার স্বপ্ন থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। আমার স্বামীর সাথে আমার স্বপ্ন বিষয়ে আলাপ করি, তিনি আমার জন্য একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে দেন এবং আমার রান্না করা খাবারের ছবি পোস্ট করার পরামর্শ দেন। 

এছাড়াও আমার শ্বশুরবাড়ি যেহেতু সিরাজগঞ্জের অত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এবং সেখানে গরুর দুধের প্রাচুর্য রয়েছে। তাই নিজেই গরুর দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করে লাকড়ির চুলায় জাল দিয়ে গাওয়া ঘি তৈরি আরম্ভ করি এবং ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকি। আস্তে আস্তে ক্রেতা তৈরি হতে থাকে। 

প্রথমদিকে মাসে হয়তো দুই থেকে তিন কেজি ঘি বিক্রি হত। সময়ের সাথে ক্রেতার পরিধি বাড়তে থাকে। পণ্যের মান ধরে রাখার ফলে রিপিট ক্রেতার তালিকাও বাড়তে থাকে।  এভাবেই আমার স্বামী আমাকে আমার স্বপ্নের দিকে নিয়ে যেতে সব সময় পাশে থেকে সাহস দিতে থাকে।

এর মাঝেই চলে আসে মহামারী করনা। ঘরে চুপচাপ বসে না থেকে তৈরি করি অপরাজিতা নামের শুধুমাত্র নারীদের অংশগ্রহণে একটি ফেসবুক গ্রুপ। যেখানে সকল পেশার নারীরা তাদের হাতে বানানো পণ্য ক্রয় বিক্রি করতে পারেন অপরাজিতা গ্রুপে আমরাই ক্রেতা আমরাই বিক্রেতা। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। 

কয়েকজন নারী এডমিন/মডারেটর (আফিয়া আফসানা, নিগার সুলতানা, শায়লা আক্তার তিথি, জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাত জান্নাত, কুসুম সজীব, ফারহানা রহিম রিমি, ফারজানা ফয়েজ) এর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাধারণ সদস্য হিসেবে নারীদের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রাণবন্ত হয়ে  উঠেছে আমাদের এই অপরাজিতা গ্রুপটি। 

আমাদের গ্রুপটিতে শুধুমাত্র নিজেদের পণ্যের পোস্ট করেই শেষ নয়, আমরা আমাদের ভালোলাগা, মন্দলাগা প্রাপ্তি, যে কোন বিষয়ে জানতে চাওয়া, রক্তের প্রয়োজনে সাহায্য সহ একে অপরের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প শেয়ার করে থাকি। যার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। 

এছাড়া সকলের উদ্যোগ গুলোকে ধরে রাখতে,  অনলাইন এর পাশাপাশি অফলাইনেও যেন উদ্যোক্তাদের কাজের সুবিধা সহ বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং গুলোর সাথে সংযুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা একটা ইচ্ছা প্রোষণ করি অফলাইনে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য এবং যেই ভাবা সেই কাজ আমরা সিদ্ধান্ত নেই " ইচ্ছা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা" নামে মহিলা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন গ্ৰহন করার জন্য, যেখানে সবাই স্বশরীরে উপস্থিত থেকে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। শীঘ্রই মহিলা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়ে যাবো আশা রাখি। 

তৃণমূলের নারীদের নিয়ে গঠিত অপরাজিতা নেটওয়ার্কের এই নারীদের মাঝে ভবিষ্যতে নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। সংগ্রামী এসব নারী সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

২০২১ সালে ট্রেড লাইসেন্স করি। বর্তমানে বুটিক ও ঘি এর কারখানা সহ ১০ জন কর্মী নিয়ে আমার মিতি নেওয়ার কালেকশন পেইজ দিয়ে বাংলাদেশের সকল স্থানে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করে আমার পণ্য বিশ্বস্ততার সহিত সরবরাহ করে আসছি। আমার সিগনেচার পণ্য গাওয়া ঘি এবং ঘানি  ভাঙ্গা সরিষার তেল, বিভিন্ন ধরনের ডাল এবং আমার ছোট্টবেলার নেশা ড্রেস ডিজাইন করে বিক্রির পরিধিও বাড়তে থাকে। বর্তমানে আমার মাসিক গাওয়া ঘি ডেলিভারির পরিমাণ প্রায় তিন মন।  

মিতি নেওয়াজ কালেকশন'স এর পরিচালক কানিজা আক্তার মিতি বলেন পণ্যের মান ও গুনাগুন ধরে রাখা, ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা, কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজের কাছে সৎ থাকলে অবশ্যই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ