সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

সময়ের সাথে সাথে সবকিছু সহজ হয়ে যায়-মুসফিকা রশিদ মহুয়া।।বিডি নিউজ.ইন।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ আমার বাবা, ভদ্রলোক একটা মহিলা কলেজের ইকোনোমিক্সের লেকচারার। গুরু/শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা খুব শাসনেই বড় হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বাবার শখ ছিল আমার ছেলে মেয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হলেও ভাল একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে বের হয়ে ভাল একটা জব করবে।

অবশ্য ছোট থেকে ক্লাস নাইন অব্দি আমার কোন প্রাইভেট টিউটর লেগেছিল না। সন্ধ্যার আজানের পর থেকে রাত ১২টা অব্দি আবার ফজরের আজানের পর স্কুলে যাওয়ার আগ অব্দি আমার সাথে সাথে আমার বাবাও আমার পাশে বসে থাকতো। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলে ডেকে বলতো চোখে পানি দিয়ে আয়। এইচ.এস.সি অব্দি বাবার চেষ্টার জোরেই হয়ত কম বেশি ভাল রেজাল্ট করেছি।

এডমিশনের আগে পাখা গজানোর কারণে প্রথমবার কোথাও চান্স পেলাম না।পরেরবার দু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলেও এবার ও ব্যর্থ। বাবা জানতো কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পাওয়ার মত পড়াশোনা আমি দু বছরে করিনি। তবুও আমাকে নিয়ে পাবনা, রাজশাহী, ঢাকা, সিলেট দৌড়াদৌড়ি করেছে।

অবশেষে ভর্তি হলাম একটা ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এ গণিত বিভাগে।পড়াশোনার পাশাপাশি আমি টিউশন করাতাম নিজের এক্সট্রা খরচের জন্য।এরপর একটা অনলাইন বিজনেস শুরু করলাম। প্রথম প্রথম আব্বু সম্মতি দেননি। এই বিজনেস নিয়ে কত রাগারাগি। উনার কথা আমার এখন পড়াশোনা করার সময়, আমার ঠিকমত পড়াশোনা করে ভাল জব করা উচিত। টিচারের মেয়ে কেন এভাবে কাপড় বেঁঁচবে। আমি আব্বুর অমতেই বিজনেসটা কন্টিনিউ করি। বিজনেসের টাকা থেকে আব্বু আম্মুকে ঈদে উপহার ও দেই। উনি মুখে কিছু না বললেও মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলেন সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

এই কদিন আগেই বিজনেসের কিছু শাড়ি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। বাবা জিজ্ঞেস করল এগুলা কি অর্ডার এর শাড়ি নাকি এক্সট্রা? আমি বললাম এগুলা এক্সট্রা এনেছিলাম। উনি বলল কলেজে নিয়ে গিয়ে ম্যাডামদের দেখালেই সেল হয়ে যাবে, নিয়ে যাব?

আমি বললাম নিয়ে যাও। আমি সেদিন শুধু মুখে হাসি রেখে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম। এসবের পাশাপাশি আমি রাজশাহী তে Mizan's  নামে একটা রেস্টুরেন্টেও  পার্ট টাইম জব করি। এটা জানার পরেও আব্বুর রিয়েকশন ঠিক আগের মতই ছিল। টিচারের মেয়ে কেন রেস্টুরেন্টে জব করবে?লোকে কি বলবে? যে মেয়েকে দিয়ে এসব করাচ্ছে।

আমি বলেছিলাম আমি তো চুরি ডাকাতি করছিনা। হালাল উপায়ে টাকা রোজগার করছি, আলহামদুলিল্লাহ এখন নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছি। খারাপ কি? গতকাল আব্বু, আম্মু, খালামনি, মামা, ফুপি, কাজিনরা রেস্টুরেন্টে বেড়াতে আসলো। ঘুড়িয়ে বললে দেখতে এসেছিল তাদের মেয়ে কোথায় কাজ করে। মালাইশেইক খেয়েছে, বলে গিয়েছে আবার আসবে।

বলে গিয়েছে তোমরা এত কম ভর্তা বানাও কেন? ১০ রকমের ভর্তা বানাবা।ঢাকায় খুব চলে। তোমাদের এখানেও চলবে। এসব শুনে মনেই হচ্ছিল না ঠিক কদিন আগে এই মানুষটাই আমাকে এখানে জব করতে দিতে চেয়েছিল না।

অথচ আমরা কখনো কখনো বলেই ফেলি "কি করেছ তুমি আমার জন্য"। আমার ও মনে হত। কিন্তু এখন মনে হয় আমার সবকিছু তো আমার বাবাই  করেছেন।এখন মনে হয় আমার বাবা কি করেন নাই আমার জন্য?

আসলে সময়ের সাথে সাথে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। আমাদের শুধু চেষ্টা আর ইচ্ছা থাকা উচিত। আর আমাদের বাবারা তো এভাবেই প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আমাদের পাশে থেকে যান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ