সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

‘তোকে পাঁচ লাখে কিনেছি, টাকা না উঠলে রক্ষা নাই’।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ‘তোকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কিনে এনেছি, আমা’র পাঁচ লাখ টাকা যতদিন না উঠবে, ততদিন তোর রক্ষা নাই।’ কাজের সন্ধানে যাওয়া বাংলাদেশি এক নারীকে এভাবেই হু’মকি দিয়ে কাজ করিয়েছেন সৌদি আরবে নারী পাচারচক্রের এজেন্ট বোরহানউদ্দিন।

অ’ভিযোগ ভুক্তভোগী এক নারীর। বোরহানের কথামতো না চললে দেওয়া হতো ইলেকট্রিক শক। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক নি’র্যা’তন তো আছেই। সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়ে পাচারচক্রের খপ্পরে পড়েও সৌভাগ্যক্রমে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন আসমা (ছদ্মনাম)। তার ওপর চালানো নি’র্মম নি`র্যাতনের বিস্তারিত তিনি তুলে ধরেছেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।

আসমা বলেন, ‘গিয়েছিলাম একটু ভালো থাকার জন্য। একটু ভালো খেতে আর টাকা উপার্জন করতে। কিন্তু সেই বিদেশ আমা’র কাল হয়ে দাঁড়ালো। সৌদি আরবে যে বাসায় কাজ করেছি সেই বাসার মালিক আমাকে খাবার দিতো একবেলা। মাঝেমধ্যে সেটাও দিতো না। খাবার চাইলেই চলতো নি’র্যা’তন। ফ্লোরে ফেলে আমাকে পা দিয়ে পিষতো, লাথি দিতো। এসব বিষয়ে এজেন্টের সদস্যদের কাছে জানানো হলে উল্টো তারাও চালাতো নি’র্যা’তন। বেশ কয়েকবার আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে।’এ বছরের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে আসমাকে সৌদি আরবে পাঠায় পাচারচক্রের এজেন্ট।

র‌্যা’­বের সহায়তায় গত ২৭ অক্টোবর ওই ভুক্তভোগী নারী সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের মানবপাচারকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গত গ্রে’ফতার করে র‌্যা’­ব।কা’ন্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগী এ নারী বলেন, ‘ওই সৌদি মালিক নিজে নারী হলেও আমা’র ওপর এমন নি’র্যা’তন চালাতো। পরে সেখান থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয় অন্য এক বাসায়। সেখানেও দেওয়া হতো ইলেকট্রিক শক। ওখানে আরও পাঁচজন মেয়ে ছিল। তাদের ইনজেকশন দিতেও দেখেছি। এজেন্টের কথামতো কাজ না করলে শারীরিক নি’র্যা’তন লেগেই থাকতো। আমাকে বাগানে কাজ দেওয়ার কথা বললেও সেটা দেওয়া হয়নি।

পাঠানো হয়েছিল বাসাবাড়িতে। ওই বাড়িতে এক নারী, তার তিন মে’য়ে ও স্বামী থাকতো। ভেবেছিলাম কোনও সমস্যা হবে না। কয়েকদিন কাজ করার পর দেখলাম ওই নারীই আমা’র ওপর নি’র্যা’তন শুরু করে। একদিক খিদের ক’ষ্ট, অন্যদিকে মা’রধর। অ’ত্যাচারটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওরা লা’ঠি দিয়ে মা’রতো না। এমনভাবে অ’ত্যাচার করতো যেন শরীরে কোনও দাগ না পড়ে।’কী’ভাবে বিদেশ গেলেন জানতে চাইলে আসমা বলেন, ‘বান্ধবী নাজমা’র স্বামী জাহিদের মাধ্যমে পরিচয় হয় ইম’রান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। জাহিদের কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ইম’রানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা আসি। সে আমাকে সৌদি আরবে ভালো বেতনের কাজের প্রলো’ভন দেখায়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমাকে আগারগাঁও নিয়ে পাসপোর্ট করিয়ে দেয় সে নিজেই। এজন্য তাকে ১৫ হাজার টাকাও দেই।যেদিন পাসপোর্ট ডেলিভা’রি দেওয়ার তারিখ সেদিন আমি আসি। আমাকে সামনে রেখে সে পাসপোর্টটি নেয়।

এরপর সেটা তার কাছে রেখে দেয়। বেশ কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে ইম’রান আমাকে কিছু বলে না। শুধু বলে, সময় লাগবে। করো’নার কারণে দেরি হচ্ছে।গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আমাকে হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে বলে ভিসা হয়েছে। দুদিন পর ফ্লাইট। এজন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাগবে পরিবার থেকে বাধা দেওয়ার কারণে আমি যেতে না চাওয়ায় আমাকে বলা হয়, বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ার জন্য তার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা দিতে হবে। না দিলে আমাকে বিদেশে যেতেই হবে। পরে ভেবেচিন্তে যেতে রাজি হই।’এ বিষয়ে র‌্যা’­ব ৪-এর অধিনায়ক অ’তিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা মানবপাচারে জড়িত তাদের বি’রুদ্ধে আমাদের নজরদারি রয়েছে। বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রে’ফতার করেছি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি চক্র নজরদারিতে আছে।

যারা পাচারের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে রয়েছেন তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা রয়েছে আমাদের।উল্লেখ্য, আসমাকে ফাঁদে ফেলে সৌদি আরবে যেতে বাধ্য করা সেই ইম’রানকেও গ্রে’ফতার করেছে র‌্যা’­ব। মানবপাচারের মা’মলায় সে এখন কারাগারে আ’ট’ক আছে।ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরও বলেন, মূলত সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে প্রলো’ভন দেখিয়ে নিম্নবিত্ত নারীদের টার্গেট করে পাচারকারীরা এ অ’পকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সরকারি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিলে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারবে তারা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে কিনা।

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ