সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়ার পর, ভুবন বাদ্যকর সিদ্ধান্ত।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়ার পর, ভুবন বাদ্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি আর বাদাম বিক্রি করবেন না।  কারণ জনসাধারণের সামনে তাঁর মত সেলিব্রেটির বাদাম বিক্রি করা মানায় না। ঠিকই তো। তাঁর ' কাঁচা বাদাম ' এশিয়া কেন সারা বিশ্বে ভাইরাল। তাঁর পক্ষে কি বাদাম বেচা শোভা পায়?

কিন্তু ভুবন কি চেনেন উড়িষ্যার ক্লাস থ্রি পাশ করা কবি হলধর নাগকে! বারোমাস নগ্নপদে থাকা ধুতি গেঞ্জি পরা মানুষটি ২০১৪ সালে পেয়েছিলেন ‘ওড়িশা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার’। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ পেয়েছিলেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরষ্কার। 

সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালে ক্লাস থ্রি পাস মানুষটিকে দিয়েছিল সাম্মানিক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি।  ২০১৭ সালে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেছিল তাঁর লেখার সংকলন  হলধর গ্রন্থাবলী।  বিখ্যাত কবি ও পরিচালক গুলজার সংকলিত কবিতার বইয়ের প্রথম কবিতাটিই এই মানুষটির লেখা। উড়িষ্যা সরকার মানুষটিকে নিয়ে মিউজিয়াম গড়ে তুলছে তাঁর গ্রামে। তাঁর কবিতা নিয়ে গবেষণা করছেন কুড়ি জন গবেষক।

এত সম্মান পেয়েও হলধর নাগের পা আছে মাটিতে। আজও গ্রামে চালান বই খাতা বিক্রির ছোট দোকানটি।  প্রতিবছর গ্রামের রথযাত্রার সময় ঘুগনি ও রাগচানা বিক্রি করেন ‘পদ্মশ্রী‘ কবি। কিন্তু ভুবন বাদ্যকরের বাদাম বিক্রি করতে সরম লাগে। সেলিব্রেটি মানুষ বলে কথা।

গ্যাস বেলুন ততক্ষণই বাতাসে ভাসে যতক্ষণ গ্যাস সক্রিয় থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার হুজুগের গ্যাস যেকোনও মানুষকে যেকোনও মুহূর্তে উল্কাগতিতে চাঁদে পৌঁছে দিতে সক্ষম। প্রচারের মহাশূন্যে মানুষটি তোফা আরামে ভাসবে  কয়েক মাস বা বছরের জন্য। 

কিন্তু তারপর? যে গতিতে উঠেছিল তার কয়েক লক্ষগুণ বেশি গতিতে নিচে নামতে থাকবে। সেই মুহূর্তে কিন্তু পাশে থাকবে না ফেসবুক ও ইউটিউবে নেট খরচ করা পাবলিক। তারা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়বে অন্য কোনও খোরাক খুঁজতে।

সহজ সরল মানুষটি যে সঙ্গীতের জগতে ঢোকার জন্য পেশা ছাড়লেন সেখান থেকে কিন্তু ডাক আসেনি এখনও। দুমাস কেটে গেলেও ডাকেননি কোনও প্রথম সারির সঙ্গীত পরিচালক বা শিল্পী। 

ভুবন বাবু এটাই আপনার ভবিতব্য। একটা কথা জেনে নিন। আপনাকে নিয়ে মজার খেলায় মেতেছে কিছু মানুষ। আপনাকে ভিডিওতে ঢুকিয়ে অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন কিছু ইউটিউবার। কেউ আপনার ভবিষ্যতটা শক্তপোক্ত করার চেষ্টা করছেন না। 

সেটা আপনি হয়ত বুঝতে পারছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। খেলা শেষ হলে এই মানুষগুলিই নির্মমভাবে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।  ফিরেও  তাকাবে না আপনার দিকে। তাই লোককবিরত্ন হলধর নাগের মত সবসময় পা রাখুন মাটিতে।

আপনি এতকাল মোবাইল বোর্ড ভাঙ্গা নিয়ে বাদাম বেচেছেন। এবার সেই মোবাইলের কদর্য রূপটা দেখার জন্য এখন থেকেই তৈরি হয়ে যান। জেনে রাখুন তেতো সত্যটাও। বাদাম আপনাকে বেচতেই হবে আজ বা কাল। হুজুগের রঙ মাখা, প্রচারের ফাঁপা ফানুসটা খালি ফুটো হওয়ার সময় দিন।

(দুজনের প্রতিভা ও মেধার মধ্যে তুলনাই চলে না সেটা আমি জানি। আসলে আমি পুরোনো পেশা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই লেখাটা শুরু করেছিলাম। তাই কবি হলধরের নামই আগে মনে এসেছিল। কারণ এতবড় কবি হয়েও পুরোনো পেশা তিনি আজও ভোলেননি। পাঠকদের লেখার মূল সুরটা ধরতে হবে। তবেই লেখার উদ্দেশ্যর কাছে পৌঁছানো যাবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ