সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

একুশে ফেব্রুয়ারি "আন্তর্জাতিক" মাতৃভাষা দিবস।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ মা মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা মানব অস্তিত্বের প্রধান তিনটি অবলম্বন। আর মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার সমূহের অন্যতম। 

বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জিবন দিয়েছিলেন বরকত, সালাম,রফিক, শফিক,জব্বার এবং নাম না জানা আরও কয়েকজন।আন্দোলনটি তুঙ্গে উঠেছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং এ দিনই ভাষার জন্য শহিদ হন তাঁরা।এ কারনে এ দিনটি তখন থেকেই আামাদের শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।ভাষা শহিদদের রক্তে রঞ্জিত সেই একুশে ফেব্রুয়ারি এখন 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃত। 

 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রয়েছে একটি গৌরবদীপ্ত ঐতিহাসিক পটভূমি। এ ইতিহাস বাঙালির মাথা নত না করার চেতনার ইতিহাস। ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পরপরই বাঙালি জাতির চেতনায় ভাষা আন্দোনলের বীজ রোপিত হয়েছিল।কারন পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা   বাংলা হলেও শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে পাশ কাটিয়ে উর্দুকে একমাএ রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।অথচ উর্দু ছিল মাএ ছয় শতাংশ লোকের মাতৃভাষা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি শাসকদের উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার এ অপচেষ্টা বাঙালিকে বিদ্রোহী করে তোলে।

 ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের   ছাএসমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তবে এ আন্দোলন জোরদার হয় ১৯৪৭ সালে ঢাকায় উর্দুর পক্ষে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষনার পর।পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যতই বাংলা ভাষার বিরোধীতা করতে থাকে, ততই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে।

সমগ্র পূ্র্ব বাংলা একই অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হয়।বাঙালি দাবি করেছিল, উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে হবে।কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ দাবি না মেনে ঘোষনা করেন 'উর্দুই  হবে একমাএ রাষ্ট্রভাষা'। পাকিস্তানের অবাঙালি কেন্দ্রীয় নেতাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভাষা আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্দোনলের কর্মসূচি দেওয়া হয়।এদিন ঢাকায় আন্দোনলরত নিরস্ত্র ছাএ জনতার মিছিলে গুলি চালায়।শহিদ হন রফিক বরকত ও জব্বার। পরে আরও কয়েকজন প্রাণ দেন।এ রক্ত পাতের ঘটনা বাংলা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে।গর্জে   ওঠে সারা বাংলা। বাধ্য হয়ে একসময় পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এরপর থেকে রক্তাক্ত একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।সময়ের দাবিতে ভাষা আন্দোলন পরিনত হয় বৃহওর জাতীয়তাবাদী আন্দোনলে। একুশের চেতনায় বাঙালিকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শাসন স্বাক্ষর করেন।কফি জালাল ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ জানালে ইউনেস্কোতে একটি আবেদন পএ পাঠানো হয়।তখন ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান,এবিষয়ে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে কোনো প্রস্তাব গ্রহন করা যায় না।এ কারনে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপিত হয়।

 ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৮ টি দেশের সমর্থন দিয়ে সর্বসম্মতভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাত্ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।এটি হচ্ছে মাতৃভাষার জন্য বাঙালিদের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতি। এরই আলোকে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী প্রথম  'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালিত হয়।ইউনেস্কোর সদরদপ্তর এবং ১৮৮ টি সদস্য দেশে এ দিবস পালন করা হয়।

যেকোনো জনগোষ্ঠীর ভাব বিনিময়, জীবনাচরণ ও শিল্প - সংস্কৃতির চর্চা ঘটে প্রথমত সে দেশের মাতৃভাষাতেই।তাই ভাষায় একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রধান ধারক ও বাহক।ইউনেস্কোর সম্মেলনে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালনের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা করে বলা হয়,সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

একুশে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোনলের ইতিহাস বিশ্বদরবারে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকীকরনের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে নতুন মহিমা,নতুন মর্যাদা। নিজেদের মাতৃভাষার এ বৈশ্বিক স্বীকৃতি আামাদের এক বড় অর্জন। মাতৃভাষাকে ভালোবাসা এবং মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সকল মানুষের মাতৃভাষাকে সম্মান করব-এ অঙ্গীকার করলেই এ মহান দিবস সার্থকতা পাবে।

লেখকঃ বন্যা খাতুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ