টুকটুক করে এগিয়ে আসা একটা অদ্ভুত ঘোর লাগা দুপুর। গুটুর গুটুর বর্ণমালা ‘ব’ এর সাথে। সন্ধ্যাকে বাঁচিয়ে দেয়া মরা বিকেল । সাদা-কালোতে তারুন্য, শিশু, এগিয়ে যাওয়া সময়। তপনকাকুর দোকান। সবুজ আর বসন্ত বাতাস ক্যাম্পাস বেঞ্চি। পুরি, সিঙারা, চা এ কচিপাতাভালোলাগা।
মা এর ওমে,বাবার স্নেহে খাসির মাংস ঝোলে রাত্রিআহার। হঠাৎ ফোন।রক্তুতো ভাই। বাঁধনের। দেখিনি। রক্তের প্রয়োজন হলে এই ফোন আসে। একজনের জরুরী রক্ত প্রয়োজন,দূর্ঘটনায় আহত হয়ে পিরোজপুর থেকে খুলনা মেডিকেলে জরুরী বিভাগে আছে।
বেশ দুরের পথ। আব্বা বাধা দিচ্ছেন। আগের রাতে জ্বরের ঘোরে ছিলাম। প্রেশার লো। মা বলছেন, ও দিতে না পারলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। আব্বার নার্ভাস অবস্থা দেখে মা আরও বললেন তোমার মেয়ে কি এই প্রথম দিচ্ছে নাকি?এবার দিলে ৫৫ বার হবে। আব্বা ভীষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রিকশা আনতে গেলেন। জুঁথিকে জোর করে সাথে পাঠালেন। পৌঁছে দেখি খুব খারাপ অবস্থা। দ্রুত লাগবে।
খুলনা মেডিকেল এর ব্লাড ব্যাংক বেশ গুছিয়ে কাজ করছে। ভালো লাগলো। ব্লাড নিয়ে গেলো। সাথে চাচা, মা বোন এসেছে। দেখতে গেলাম তাকে। নসিমনে আলুর বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলো পিরোজপুর কোন এক রাস্তা দিয়ে । মা আর বোন নিয়ে সংসার। পড়া বাদ দিয়ে তাকে কায়িকশ্রমজীবি হতে হয়েছিলো। এক বাস এসে তাকে .....মাসুম বেঁচে গেলোও তার পা হারাবে,মনে হলো।
উনিশ বছরের একটি ছেলে আমার রক্তুত্ব ভাই । কিন্তু হঠাৎ করে জেগে দেখবে তার একটি পা নেই, যা ছিলো তার বেঁচে থাকার ও বাঁচিয়ে রাখার অবলম্বন!
সালাম রফিক বরকতের রক্ত দেয়া একুশ! একটি বাংলা। একটি বাংলাদেশ। এখনও আহত। এখনও দুর্দশায় আক্রান্ত! কবে বসন্ত বাতাসে সবাই মিলে ভালো থাকার , সুস্থ থাকার দিন আসবে? কবে সেই একটি বসন্ত দিন? একটি শোকাবহ একুশ শক্তির আঁধার হয়ে উঠবে?
লেখকঃ আঁখি সিদ্দিকা।
0 মন্তব্যসমূহ