সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

আমৃত্য সাধুসঙ্গ নিয়ে থাকতে চান দেবোরা জান্নাত।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি এই দেশে এবং এই লালনেই। তাই আর ফ্রান্সে ফিরে যাবো না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দেবোরা কিউকারম্যান। তিনি ফ্রান্সের নাগরিক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। দেবোরা একজন ভালো ট্রান্সলেটর, দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজও করেছেন। শুধু তাই নয়, দেবোরা দর্শনে এমএ এবং ইয়োগার শিক্ষক ছিলেন।

২০১৬ সালে বাউল সম্রাট লালন শাহর জীবনদর্শন নিয়ে জানতে বাংলাদেশে আসেন দেবোরা কিউকারম্যান। এরপর আটকে গেছেন সেই জীবনদর্শনের কাছে। বাউলদের এই জীবনাচারে খুঁজে পেয়েছেন প্রশান্তি। থেকে যান প্রখ্যাত বাউল ফকির নহির শাহর শিষ্য হয়ে। তার কাছে আত্মিক শান্তি ও সৃষ্টি রহস্য খুঁজতে দীক্ষা নিচ্ছেন ফ্রান্সের এই তরুণী। নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন দেবোরা জান্নাত।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ ) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় ছেঁউড়িয়ায় চলছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর স্মরণোৎসব। লালন একাডেমির নিচেই মিললো হাজারো বাউল-সাধু, শিষ্য-গুরুর সঙ্গে দেখা। সেখানেই এসেছেন প্রখ্যাত বাউল ফকির নহির শাহ ও তার শিষ্য ফরাসি এই তরুণী।

সাধু হাটে দেবোরা জান্নাতের সঙ্গে কথা হয় বিডি নিউজ ডট ইন এর প্রতিবেদকের।

সেই আলাপচারিতায় জানালেন তার বাউল হওয়ার কাহিনী। স্পষ্ট বাংলায় বললেন, ২০১৬ সালে লালনের দেশ কুষ্টিয়ায় আসি। এসেছিলাম লালনের গবেষণায়। তবে আর ফিরে যেতে পারিনি।

‘প্রথম যখন আসলাম বাংলা ভাষা জানি না। কিন্তু ভাষা না জানলেও আমি গুরুজি (ফকির নহির শাহ) সঙ্গে সাধুসঙ্গে গেলাম। সাধুসঙ্গতে গিয়ে সেখানকার শৃংঙ্খলা ও ভাব বিনিময়ের মধ্যে যে লালন দর্শন পেলাম সেখানে ভাষার কোন বিষয় ছিলো না।

‘যেমন কর্ম তেমন ফল’-উল্লেখ করে তিনি বলেন, লালন সাঁইজির দর্শন যারা মানে, সাধনা করে, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে তবেই সৃষ্টির এ বিস্ময়কে জানা যাবে।

তার মতে, ধর্মের চেয়ে সাঁইজির নিকট ছিল মানুষ বড়; ধর্ম কিংবা জাত-পাতের মধ্য দিয়ে নয়, ঈশ্বরকে পেতে হলে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে জানা দরকার সুপথের সন্ধান।

কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, অবিবাহিত হওয়ায় দেবোরা জান্নাত এই আস্তানায় বসবাসকারী নহির শাহর আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেছেন গুরুর আদেশে।

এই বিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, সংসার হলো সমাজ, সংসার হলো ঘর। সংসার হলো মনের মানুষকে নিয়ে যে ঘর ও সমাজের বসবাস। এমন চিন্তাচেতনা থেকে ঘর সংসার করতে গুরুজির শিষ্যকেই বেছে নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। বেশ কয়েকবছর ধরে নিবীড় সম্পর্কের সাথেও কখনো তার সঙ্গীর সাথে অমলিন কিংবা অশোভন আচরণ হয়নি। তবে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হলে বলতাম আরেকটা বিয়ে করে (নিকেহ) নারী নিয়ে সংসার জ্বালা নোঝো গিয়ে। আমি শুধু চেয়েচেয়ে দেখবো।

লালনের দেশ কুষ্টিয়ায় গুরুজি নহির শাহর শিষ্য হিসেবে আমৃত্য সাধুসঙ্গ নিয়ে থাকতে চাই বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, দেহ কেবলমাত্র সবকিছু বয়, মরে গেলে লাশ মাত্র। আমি আমার লাশ বা দেহটি এই কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রাগপুর আশ্রমে রেখে দেবো। মাজার হবে এখানেই।

দেবোরা জান্নাত বলেন, আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি এই দেশে এবং এই লালনেই। তাই আর ফ্রান্সে ফিরে যাবো না।

ফকির নহির শাহ বলেন, দেবোরা গত ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আসে। সত্যের সন্ধানে সে পৃথিবীর প্রায়ই ১৫ টি দেশ ঘুরে এসে তারপর বাংলাদেশে এসেছে। লালনকে বিশদ জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে আমার সঙ্গে দেখা হয়। পরবর্তীতে সে ২ সপ্তাহব্যাপী সাধুসঙ্গ করে। লালন দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করে। তারপর সে লালন দর্শনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। লালন দর্শন সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে চাইলে আমি তাকে বাংলা ভাষা শেখার কথা বলি। দেবোরা বাংলা ভাষা শেখার পর তার সঙ্গে আমার ভাব বিনিময় হয়। আমার দর্শন জ্ঞান আস্তে আস্তে তার মধ্যে দেওয়া শুরু করি এবং সে এখন লালনের দেখানো পথের অনুসারী।

সত্য ও সু-পথের সন্ধানে মানবতার দীক্ষা নিতে ইতোমধ্যেই আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধু, গুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছেন সাঁইজির (লালন শাহ) মাজারে। লালন উৎসব কেন্দ্রে করে কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন শাহের জীবদ্দশায় চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ণিমার রাতে দোল পূর্ণিমার উৎসব পালন করা হতো। সেই থেকে লালন ভক্তরা প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত এ উৎসব পালন করেন। সাঁইজির স্মরণে দিবসটি ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান হয় আখড়াবাড়িতে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন পুরো এলাকা মুখরিত। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ