সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

নরসিংদীর মেয়ে সাবিকুন্নাহার মনির সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের কারুপন্যের উদ্যোক্তাদের কে নিয়ে ২০২০ সাল থেকে কাজ করে চলেছে একটি অনলাইন গ্রুপ, যার নাম Bangladesh Crafts Foundation (BCF)  এরই ধারাবাহিকতায় এই প্লাটফর্ম এর উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলেন বিডিনিউজ.ইন।  

নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার পুটিয়া ইউনিয়ন এর তেলিয়া পূর্ব পাড়া গ্রাম এ ১৯৯২ সালের ১২ই ডিসেম্বর জন্ম। পরিবারের ছয় ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ সন্তানটির নাম সাবিকুন্নাহার মনি।  

একই জেলা,উপজেলা, ইউনিয়ন এর শাষপুর কাজী মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করে ২০০৮ সালে। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা  থেকে এইচ এস সি ও ডিগ্রি পাস কোর্স কমপ্লিট করে ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা থেকে মাস্টার্স পাশ করেন ৩.৪৮ পেয়ে। 

বিবাহিত জীবন শুরু হয় ২০১১ সালে। তখন স্বামীর কর্মসূত্রে কুমিল্লা ২০১২ সাল থেকে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে টিউশনি ও হাতের কাজের পন্য নিজে তৈরি করে ও স্হানীয় দের কাছে বিক্রি করেন।২০১৩ তে জব পরিবর্তন এ চলে আসলাম গাজীপুর। 

২০১৫ সালে গর্ভবতী হওয়ায় ঢাকা চলে আসার পর  সেখানে  শারীরিক মানসিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে যান ফলে আর কন্টিনিউ রাখা সম্ভব হয়না।তাছাড়া ছোট বাচ্চা নিয়ে ইচ্ছে থাকা সত্বেও সাপোর্ট না থাকায় গ্রাজুয়েশন টা ই শেষ করেন।

২০১৭ সালে আবারো গাজীপুর শিফট হন তারা।  ২০১৮ সাল থেকে পুরনো পোকা মাথায় নড়ে ওঠে। শুরু করেন আবার স্বউদ্যোগে কাজ করা। বাসা বাড়ির আশেপাশে সবাই কে দেখান কাজ গুলো তারা পছন্দ করে ও ক্রেতা হন।

বেবি কাঁথা তৈরি শুরু করেন। আশেপাশে প্রায় ৭/৮ জন মহিলা কে দিয়ে কাজ চলতে থাকে। গ্রামেও কিছু কাজ করানো হয়।

২০২০ এ মহামারীর থাবায় যখন সব স্হবির তখন পন্য বাড়াতে হয় কারন সে সময়ে যেমন চাহিদাটা বেড়েছে, টিকে থাকাও কঠিন হয়েছে। কারন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। আর এই করুন সময়ে তিনি জয়েন হোন বিসিএফ অনলাইন গ্রুপে।  সাথে ছোট বড় আরো কিছু গ্রুপে তিনি এক্টিভ হলেও তার মুল পরিচিতি আসে বিসিএফ থেকে।  গ্রুপটির লাখপতি সেলারদের মধ্যে তিনি একজন।।  

মনি নিজের বোনকে নিয়ে তার হাতের কাজের কাথার পাশাপাশি শুরু করলেন কাঠব্লক এর শাড়ি করা, সাথে থ্রি পিছ ও সংযোগ করলেন। নরসিংদির মেয়ে হওয়ায় ছোট বেলা থেকে পিঠা টা দারুণ পারেন বানাতে। যেহেতু নরসিংদীর মেয়ে,  সেই সুবাদে বানাতে পারেন দারুন নকশি পিঠা।  এবার পিঠার জন্য তো কাস্টমার কে ভালো গুড় দিতে হবে। এড হলো এটাও। এভাবেই নকশিকাঁথা, শাড়ি, থ্রি পিছ, নকশিপিঠা, খেজুর ও আখের গুর এড করে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছেন। 

এ পর্যন্ত শুধু অনলাইনে ৫ লাখ  টাকার বেশি পন্য বিক্রয় করেছেন। তাছাড়া বাইরের বিভিন্ন দেশে মেলায় অংশগ্রহণ করে এমন ব্যক্তিরা পন্য নেন। বিশ্বের দরবারে নিজের জেলা ও দেশের পন্য, জেলার পন্য  উপস্থাপন করছেন। দক্ষ জনবল তৈরি করা এবং কর্মক্ষম মানুষকে কাজ দিয়ে উপার্জন করতে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে চান।

এক সময়ের বেকার ঘরকুনো মেয়েটা আজও ঘরকুনো কিন্তু দেশকে দিচ্ছে অনেক কিছু তার কাজ দিয়ে। সংসার নামক জায়গাটা যার কাছে ছিল আতংক সে সংসার চলছে গত চার মাস ধরে একক তার উপার্জন এ। সে এখন আর কারও কটু কথা শোনার সময়ও রাখেনা জবাব দিচ্ছে কাজের মাধ্যমে। যাদের কাছে অবহেলিত ছিল আজ তাদের কাছে অনেক সম্মানিত। এই ভাবে সকলে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান, পিছনে পড়া লোকগুলো সামনে আনবেন কাজ দিয়ে। 

বিসিএফ  থেকে পেয়েছেন অনেক কিছু, থাকতে চান সবার দোয়া ও ভালো বাসা নিয়ে। এতটা সময়ে অনলাইনে সেল অনেক কম। বিদেশি পন্য সেল করলে এ পারিশ্রম হয়তো দ্বিগুন সেল সম্ভব হতো। কিন্তু দেশীয় পন্যর প্রতি টান থাকায় অনেক প্রলোভনে প্রলোভিত বা হয়েও কেবল মাটি খিচরে দেশীয় পন্য নিয়ে কাজ করছেন নিজের মনের তাগিদে।

Bangladesh Crafts Foundation এর লক্ষ্য যেমন দেশের পন্যকে হাইলাইট করা তেমনি সাবিকুন্নাহার মনির উদ্দেশ্য ও তাই। সেজন্য দুজনের পথ চলা দীর্ঘ দিন ধরে একসাথে। স্বপ্নের বাস্তবায়নের সন্ধান বিসিএফ  ওনি পেয়েছেন বলে একই পথে হাটছেন। এ পথ চলা থাকবে এক সাথে আমৃত্যু। 

যেখানে বিদেশি পন্য বাজার সয়লাব, সেখানে দেশী পন্য নিয়ে কাজ করাটা অনেক চ্যালেন্জিং তাও কারও ছত্রছায়া ছাড়া। একক ভাবে এগিয়ে যাওয়া আরও দুস্কর। আর এ কাজটাই করছেন নরসিংদীর মেয়ে সাবিকুন্নাহার মনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ