সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

কুমারখালীতে একটি গরু ঘিরে প্রবাসী স্ত্রীর নানান স্বপ্ন।।BDNews.in

আমগাছে বাঁধা রয়েছে রাজাবাবু, তাকে বাতাস করছেন প্রবাসীর স্ত্রী।

গোলাম সরোয়ার,  কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মো. জসিম মোল্লা (৩০) জীবিকার তাগিদে থাকেন প্রবাসে। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী হালিমা খাতুন গৃহিনীর কাজকর্ম করেন। কাজের পাশাপাশি তিনি একটি ষাঁড় গরুর লালন - পালন করেছেন।

ছয় বছরের দম্পত্ত জীবনে এখনো তাঁদের কোলজুড়ে নেই কোনো সন্তান। তাইতো তিনি প্রায় চার বছর ধরে সন্তানের মতোই গরুটিকে পরিচর্যা করেছেন। আদর করে গরুটির নামও রেখেছেন ' রাজাবাবু।

এই দম্পতি উপজেলার সদকী ইউনিয়নের উত্তর মূলগ্রামের বাসিন্দা। ' রাজাবাবু ' নামের ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটির উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফিট ১০ ইঞ্চি এবং লেজ থেকে মাথার দ্যৈর্ঘ প্রায় আট ফিট। যার ওজন আনুমানিক ৯৫৭ কেজি অর্থাৎ ২৩ মণের বেশি। প্রবাসীর স্ত্রী গরুটির দাম হাকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, প্রায় ৬ বছর আগে উত্তর মূলগ্রামের মৃত সামছদ্দিন মোল্লার ছেলে জসিম মোল্লার সাথে একই এলাকার মো. চাঁদ আলীর মেয়ে হালিমা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর জসিম মোল্লা জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন ইরাকে। আর স্ত্রী হালিমাকে তাঁর শ্বশুর ফ্রিজিয়ান বাছুরসহ একটি গাভী গরু কিনে দেন। সেই বাছুর গরুটিই আজকের বিশাল ষাঁড় গরু ' রাজাবাবু '। প্রায় চার বছর ধরে ঘাঁস, খড়, ছাল, ছোলা, ভূট্টাসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে নিজের সন্তানের মতোই গরুটিকে পালন করছেন হালিমা খাতুন। প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার খাবার খায় গরুটি। এটি ঘিরে হালিমার চোখে এখন নানান স্বপ্নঘেরা।

আরো জানা গেছে, কুরাবানি ঈদের সময় ঘুনিয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের তেমন সারা পাওয়া যায়নি। এনিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে,  টিনশেডের মেঝেপাকা ঘরের সামনে একটি আমগাছ রয়েছে। সেখানে দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে কালো রঙের লালবাবু। তাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন প্রবাসীর স্ত্রী হালিমা খাতুন।

এসময় হালিমা খাতুন বলেন, তিনি প্রায় চার বছর ধরে নিজ সন্তানের মতোই গরুটিকে লালন - পালন করছেন। দেখতে সুন্দর ও বিশাল দেহের অধিকার হওয়ায় তিনি আদর করে নাম রেখেছেন রাজাবাবু। তাঁর প্রতিমাসে ঘাঁস, খড়, ছোলা, গম, ধানের গুড়াসহ গরুর খাবাবের জন্য প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় ২৩ মণ ওজনের গরুটিকে তিনি ১০ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, গরুর বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি পালনের জন্য প্রায় এক লাখ টাকার মধ্যে একটি গরু কিনবেন। বাকী টাকা দিয়ে তিনি জমি কিনবেন, সেখানে বাড়ি বানাবেন।

প্রবাসীর শ্বশুর মো. চাঁদ আলী বলেন, চার বছর আগে তিনিই মেয়ে - জামায়কে বাছুরসহ একটি গাভী গরু কিনে দিয়েছিলেন। সেই বাছুর গরুটিই এখন হাতির মতো দেখতে লাগে। বাড়ি থেকেই তিনি গরুটিকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান। কিনতে ইচ্ছুকদের তিনি ০১৬৪৫৮৬৬৩৯২ মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছেন।

তাঁর ভাষ্য, ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটির উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফিট ১০ ইঞ্চি এবং লেজ থেকে মাথার দ্যৈর্ঘ প্রায় আট ফিট। যার ওজন আনুমানিক ৯৫৭ কেজি অর্থাৎ ২৩ মণের বেশি। 

মেসেন্জারে প্রবাসী জসিম মোল্লা জানান, তাঁর বাড়িতে তেমন লোকজন নেই। বড় গরু বাজারে আনা নেওয়া সমস্যা। আবার ঈদও চলে আসছে। বেঁচাবিক্রি নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

উপজেলা প্রাণিসস্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,  একটি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নে এবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৩ হাজার ৫৯৭ টি খামার ও বাসাবাড়িতে মোট প্রায় ২৩ হাজার ৫৬৬ টি হৃদপুষ্টকরন পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা উপজেলায় চাহিদার তুলনায় ১০ হাজার ৯৩৫ টি পশু বেশি রয়েছে। তিনি সব সময় পশু ও মালিকদের সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ