![]() |
শিশুর মানসিক বিকাশ অর্জনে চাই সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ-মিজানুর রহমান মিজান। |
কিন্তু একটি পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ গঠনে বর্তমানে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে সেটা এখন প্রশ্নবৃদ্ধ। যেই জায়গায় পরিবারে বাবা-মা তাদের শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষা দেওয়ার কথা আজ সেই জায়গায় তাদের মধ্যেই প্রতিনিয়ত লেগে থাকে বিভিন্ন ঝগড়াঝাটি, কলহ বিবাদ ইত্যাদি। আর এসব কিছুই একটি শিশুর মনে চরম আকারে দাগ কেটে।
পরিবার যদি শিশুকে সুনির্দিষ্টভাবে সমাজ কাঙ্ক্ষিত পন্থায় গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তার মধ্যে সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বের বিকাশ গটানো কখনোই সম্ভব নয়। ফলে সে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে।
কুমারখালী যদুবয়রা ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, পিতা মাতা যদি তাদের ছোট ছোট সন্তানদের সামনে ঝগড়া মারামারি করে তাহলে ঐ সন্তানদের মানুষিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। তারা না পারে বাবা কে কিছু বলতে, না পারে মা কে কিছু বলতে। বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করলে বা বাবা মাকে আঘাত করলে সন্তান সেদিন খেতে বসলে খেতে পারে না, শ্রেনী কক্ষে পাঠে মন বসে না, সহপাঠিদের সাথে খেলার মাঠে নিষ্প্রান থাকে।
সারাক্ষন যেন মনে হয় মা বুঝি না খেয়ে আছে, মা বুঝি আমাদের ছেরে কোথাও চলে যাবে, মা কি আত্মহত্যা করল, তখনি যেখানেই থাকে দৌড়ে ছুটে যায় বাড়ির পানে মা মা বলে চিৎকার করতে করতে বাড়ির এপাশ ওপাশ, এ রুমে ও রুমে বিপুল উৎকন্ঠা নিয়ে খুজতে থাকে। সারা রাত উৎকন্ঠা নিয়ে ঘুমিয়ে জেগে উঠে ভাবে বাবা কি মাকে মেরেছে নাকি, সকালে মাকে কি আর পাব না। এভাবেই দারুন অস্থিরতা নিয়ে সন্তানের রাত কাটে। এ উৎকন্ঠা শিশুদের স্বাভাবিক মানুষিক বিকাশের অন্তরায় দাগ কাটে।
পিতার আঘাতে মায়ের শরীরের ক্ষত চিহ্ন সন্তানের হৃদয়ে আজীবনের জন্য ক্ষত হয়ে যায়। পিতার প্রতি মায়ের অবহেলা আর অযাচিত বাক আঘাত সন্তানের হৃদয়টা দুমরে মুচরে যায়। বাবা যখন তার সল্প আয় দিয়ে পরিবারের আর্থিক যোগান দিতে ব্যর্থ হয় আর সে কারনে মা যদি বাবাকে গালি গালাজ করে সেদিন সন্তান থাকে উৎকন্ঠায় বাবা কেন বাড়ি ফেরে না, বাবা কি বাড়ি আর ফিরবে না, বাবা কোথায় গেল। এ উৎকন্ঠা সন্তানের মানসিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করে।
তিনি আরো বলেন, আমরা পিতা মাতারা সন্তানদের মানুষিক ক্ষতি সাধিত হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকব ইনশাআল্লাহ্।
আপনি ভাবছেন, আপনাদের ঝগড়া-বিবাদ দেখে আপনার সন্তান ভয় পাচ্ছে। আপনাকে আরো সমীহ, আরো শ্রদ্ধার চোখে দেখতে দেখছে, তাই না? মোটেও নয়। সে ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে। আপনাদের ঝগড়া তাকে অনেকখানি পিছিয়ে দিচ্ছে। সে ভাবছে জীবন সম্ভবত এরকমই, ঝগড়াময়। আপনাদের এই বিবাদ দেখে সে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনের কথা ভাবতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে পারে না একটা সুন্দর জীবনের।
ভাবুন তো, আপনার কাছে সন্তানের চেয়ে কি ঝগড়াই বেশি ভালো ?
দয়া করে সাংসারিক বিরোধ, কলহগুলো থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন। তাদের একটু ভালো থাকতে দিন। তাদের সুন্দর মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে দেবেন না। সন্তান আপনার। তার পূর্ণ বিকাশের ব্যাপারে খেয়াল রাখার দায়িত্বও আপনার।
আর এর জন্য অন্তত সন্তানের মঙ্গলের জন্য হলেও আপনারা পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, কলহ বিরোধ থেকে দূরে থাকুন। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন?
মনে রাখবেন, আপনাদের সুষ্ঠু সুন্দর চলাফেরা এবং পারিবারিক পরিবেশই শিশুর সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এ জন্য সন্তানদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করুন, আপনাদের মধ্যে যাতে ঝগড়া-ঝাটি, বিরোধ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি না ঘটে সেদিকে যত্নবান হোন এবং শিশু যাতে অশান্তিপ্রবণ পরিবার ও অপরাধী পরিবারে বড় না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। তাহলেই আপনার শিশু সমাজ কাঙ্ক্ষিত সদস্যে পরিণত হয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।
0 মন্তব্যসমূহ