সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

সম্পর্কের আটক - শিরিন শবনম।।BDNews.in


টিকে থাকার প্রয়োজনে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে আর এই আটক না আটক সবকিছু এসেছে সমাজের বৃহৎ স্বার্থে তখনকার প্রজ্ঞাবান মানুষের তৈরি কিছু নিয়মের ফাঁক ফোকর গলে। যে নিয়মগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে বিয়ে নামক প্রথা। এই প্রথা কমনভাবে প্রয়োজনীয়।‌ তবে শারীরিক পার্থক্যের সুবিধাভোগী প্রিভিলেইজড পুরুষশ্রেণী এই প্রথার হাত ধরে নানা অপকৌশলের পথে হেঁটেছে সহস্র বছর ধরে। বাকি সাধারণ মানুষেরা এবং তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিতরা সেই পথে চলেছে নিজের অজান্তেই বা বোধের বাইরেই বা সঠিক মনে করে।
হাজার বছর থেকে চলতে থাকা প্রথায় ভাঙন শুরু হয়েছে নারীরা জ্ঞান প্রজ্ঞা মেধা যোগ্যতায় এগিয়ে আসার পরে। কিন্তু পরিবর্তনে সময় লাগবে সহস্র বছর।
নানামুখী সমস্যা এভাবে অথবা ওভাবে সবসময়ই থাকবে। মানুষ কখনোই একেবারে স্বাধীন নয়। তবে নিজের ডিসিশন নিজে নিতে পারার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ প্রতিষ্ঠিত থাকা দরকার। পুরুষ নারী নির্বিশেষে মানুষ নিজের ইচ্ছেয় যেন বেছে নিতে পারে নিজের জীবন যাপনের ধরণ। তবে সেখানে নিজের দায়িত্ব নিজে বহনের সক্ষমতা থাকতে হবে। নাহলে কিছু হবে না। আজীবন আটকই থাকতে হবে।
জাস্টিন পরিবারের সাম্প্রতিক আইনী বিচ্ছেদ সম্পর্কে আটকে থাকা না থাকা নিয়ে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল জগত। নারীর বঞ্চনা, স্বাধীনতা এসব বিষয়ও উঠে আসছে।
একটা বিষয় একই সাথে আলাদা আলাদা পারস্পেকটিভে ট্রু হতে পারে। যারা সেপারেশনে যাচ্ছে তারাই জানে কেনো কী হয়েছে বা হচ্ছে। পুরুষ নারী উভয়ে সমান অধিকার রাখে তার অনুভূতির স্বাধীনতায়। একজনের দিক থেকে অথবা উভয়ের দিক থেকে একমত হয়েই উইথড্রয়ালের সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে কোনো জুটি।
বাইরে থেকে আমরা শুধু সম্পর্কের বিচ্ছেদটা দেখি। তার পিছনে কেবল একটি কারণ থাকে না। এবং একদিনেই তা হয় না। বহুদিনের বিন্দু বিন্দু কারণ বা অসন্তোষ জমা হলেই পরিণত বোধউপলব্ধির মানুষ আত্মমর্যাদার প্রশ্নে এবং নিজের আত্মার স্বাধীনতার প্রশ্নে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে। সব কারণ সবার জানা থাকে না। ব্যাক্তিগত সেই কারণগুলো অন্যের জানার প্রয়োজনও নেই। দুইজন স্বাধীন সত্তার স্বনির্ভার মানুষ দীর্ঘদিন একটি সম্পর্কে আটকে বা বাঁধা পড়ে না থাকতে চাওয়াটা মোটেও অন্যায় বা আশ্চার্য বা দূর্ঘটনার কোনো বিষয় নয়। এইটুকু স্বীকৃতি থাকাই এখনকার সময়ের সভ্যতার দাবি।
প্রকৃতি প্রতিদিন রূপ বদল করছে, মহাজগত ঘূর্ণয়মান। বিজ্ঞান বলে, মানুষ এস্টরয়েড পার্টিকেলে তৈরি। তো সেই মানুষ একই সম্পর্কে আটকে না থাকতে চাওয়াই তো স্বাভাবিক।
তবু এই যে আমরা বেশিরভাগ মানুষ একজন সঙ্গীর সাথে জীবন কাটিয়ে দেই এটার পিছনে আমাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, সামাজিক নিয়মে অভ্যস্ততা, সন্তান এবং পরিবারের স্থিতিশীলতা - এইসব কাজ করে। কিছু মানুষ সারাজীবনে হয়তো বুঝতেই পারি না - কোনটি আমার রাইট!
আমার মনে হয় ট্রুডো পরিবার যথেষ্ট সময় নিয়ে বাচ্চাদের বড় করে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তকে আইনী ব্যবস্থায় নিয়েছেন। ১৮ বছর লম্বা একটা সময়। তিনটি সন্তানের পেরেন্ট হয়ে এ সম্পর্ক ভাঙা সহজ বিষয় নয়। বিনা কারণে তো নয়ই।
এমন ঘটনা থেকে আমাদের নিজেদের দিকে তাকানোর শিক্ষা নেয়া দরকার। আমরা কি পরস্পরকে নিয়ে সুখী? যদি হই তবে অল ইজ ওয়েল।
আর যদি না হই তবে ভেবে দেখতে হবে, আমার কি সঙ্গীর প্রতি নির্ভরশীলতা আছে? যদি থাকে কিছু করার নেই। আটকেই থাকতে হবে।
আর এই সম্পর্ক নিয়ে সুখী না হলে এবং কোনো নির্ভরশীলতা না থাকলেও আটকে থাকা যায় না এমন নয়। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা। স্বীয় ইচ্ছা। অধিকার। এ নিয়ে কথা নেই।
কিন্তু কেউ যদি নিজেকে সুখি না ভাবে এবং আটকে থাকতে না চায় তবে সে আটকে থাকতে না চাইলে দোষের কিছু নেই। নিজের স্বাধীন সত্তায় নিজের মতো নিজের জীবনের বাকি সময়টা যাপন করা ব্যক্তি অধিকার।
কিন্তু সমস্যা হলো, আটকে থাকা না থাকার মতো ব্যক্তি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাজ করে অন্যে। সমাজ, পরিবারের মানুষেরা। তাই হয় আটকে থাকা না হয় দোষী সিলড হওয়া শেষ হয় না।
এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই - সমাজের লেয়ার কখনও জিরো হবে না।
এক বিধান সবার জন্য প্রযোজ্য বা প্রয়োজনীয় না।
সময়ের সাথে ফর্ম বদলাবে। কিছু বাতিল হবে কিছু যুক্ত হবে।
তবে অবশ্যই সবার জন্য এক বিধান নয়, এক জীবন প্রক্রিয়া নয়, সমতাও নয়।
নিজেকে নিজে যে শিক্ষা, অর্থ, জীবন যাপনের পরিবেশ, মানে যেখানে উত্তোলন করতে পারবে সে ততটুকু আপডেটেড স্বাধীনতাই ভোগ করতে পারবে।
তবে সমাজবদ্ধ মানুষ সামাজিক নিয়েমের অধীনেই থাকে কিছুটা বা অনেকটা।
যার ডেপেন্ডেন্সী থাকে সে না পাওয়া বুঝলেও আটকে থাকে। কারও মেধার স্তর আবার না পাওয়া নোটিস করার মতো সূক্ষ্ম নয়। আবার যে স্বনির্ভর জীবনে সক্ষম সেও জীবনের ঘাটতি মেনে নেয় একটা সময়ের পর।
সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, নারী-পুরুষ ভেদে নিজে শিক্ষা, অর্থনীতি, জীবন যাপনের স্তর, উপলব্ধির সূক্ষ্মতা বুঝতে পারার মতো মেধার স্তরে পৌঁছানো।
তখন আটকে থাকা না থাকার প্রশ্নটা মৌলিকতা হারায়।
একসময় ভালো লেগেছে বা প্রয়োজন ছিল তাই দু'জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ একসঙ্গে থেকেছে।
একসময় ভালো না লাগলে বা কম্প্রোমাইজ করার প্রয়োজনীয়তা না থাকলে সে আটকে থাকতে চাইছে না‌।
এটা কিন্তু তার অধিকার।
পুরুষ নারীর সম্পর্ক মানে বিয়ে প্রথাটা আইনী হলেও সম্পর্কটা হৃদয়িক। ব্লাড বন্ডেড না। লিখিত বা অলিখিত এক চুক্তি। সে চুক্তির ধারা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে লঙ্ঘিত হলে আটকে থাকতে হবে কেনো?
অথবা নিজের প্রতি অনেস্ট থাকতে পারলে, বোধের প্রতি অনেস্ট থাকতে পারলে - শুধু ভালো লাগছে না বলেও সেপারেশনে যাওয়া যায় বা যাওয়া গর্হিত নয়।
ভালো লাগা না লাগা এগুলো তো উপলব্ধির ব্যাপার। এর কোনো বাধ্যবাধক রুল নেই।
কাউকে কোনোদিন ভালো লেগেছিল বলেই সারা জীবন লাগবে বা অমুককে একদিন ভালো লাগেনি বলে কোনোদিন লাগবে না - এমন কোনো রুলস নেই।
আটকে থাকা না থাকা কোনোদিন বদলাবে না। সব মানুষ এক সঙ্গে চক্ষুষ্মান হয় না। স্বাবলম্বী হয় না। স্বাধীন সত্তার জন্য সমান চেতনাপ্রবাহ সমৃদ্ধ না।
বৈষম্যের ক্ষেত্রে নারী সাফারার হলে নারীকেই সচেতন হতে হবে। নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। নির্ভরশীলতার বাইরে আসতে হবে। বাইরের ফোর্সের দিকে তাকিয়ে থাকলে চিরদিন আটকেই থাকতে হবে।
পরিবারে, সমাজে আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় বাস করা মানুষ মূলত কখনোই স্বাধীন নয়। মানুষ এক পরাধীন সত্তা। জন্মের পরে এবং বড় হয়ে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে নানা সীমাবদ্ধতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। আর এটা মন্দ কিছু নয়। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত এবং বৃহৎ স্বার্থেই হোমোসেপিয়েন্স গোষ্ঠীবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ হয়েছে।
সময়ের বদলে শিক্ষা প্রজ্ঞায় উন্নত মানুষ নিজের সুখের ঠিকানা নিজেই খুঁজে নিবে সমাজবদ্ধতার মধ্যে থেকেই।
একটি মাত্র জীবন - অবহেলায় ভেসে যেতে দেয় অন্যায়। ভীষণ অন্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. নিজের প্রতি স্বাবলম্বিতা মানুষের অসহায়ত্ব কমাতে সহায়ক হয়। বন্ধন প্রয়োজন জীবনে রসময় রাখার জন্য। নিরাপদ বলয়ে রাখার জন্য। কিন্তু আস্থা বিশ্বাসের ঘাটতি হলে আলাদা থাকাই সম্মানজনক।
    জেনেটিক কারণেই বেশিরভাগ সময় মানুষ বহুগামী বা অবিশ্বস্ত হয়। পৃথিবী এমনি। তাই প্রত্যেকের দরকার নিজের যোগ্যতায় বাঁচার প্রচেষ্টায় সফল হওয়া। তাহলে অন্তত সম্মান নিয়ে বাঁচা যায়।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

      মুছুন