বাড়িতে ঢুকেই ব্যাগটা সোফায় ফেলে অনসূয়া এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে। দুহাতে জল নিয়ে মুখটা ধুতে থাকে। আস্তে আস্তে সারাদিনের চড়া মেকআপ ধূয়ে যেতে লাগলো। তারপর বেরিয়ে আসা মুখশ্রী দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। চোখের তলায় অজস্র কালি জমাট বেঁধেছে, তার ওপর পুরুষালি শক্ত হাতের থাবার দাগ। সারা মুখশ্রী জুড়ে অনেকগুলো কাটার দাগ। কোথাও আবার জমাট বেঁধেছে রক্ত। চুলে ঢাকা ঘাড়ে রক্ত জমাট বেঁধে চলেছে দিনের পর দিন। জামাকাপড় পরিবর্তনের সময় তার চোখে পড়ে, সারা শরীর জুড়ে অজস্র বেল্টের ক্ষত, কোনোটা পুরাতন আর কোনো টা গতকালের...
নিজেকে দেখে মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের অন্ধকারে। কোথায় গেল সেই আগের স্বাধীন অনসূয়ার গল্প! আজ সে কেবলই বন্দী। বিবাহ নামক বন্ধনে সে জর্জরিত, উপেক্ষিত ও অত্যাচারিত। এসব মানিয়ে নেওয়াই তার প্রধান ধর্ম। প্রতিনিয়ত তাকে অত্যাচার মুখবন্ধ করে সহ্য করে যেতে হয়। একবার ভেবেছিল এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাবে। ডিভোর্স দেবে সৌমেন্দ্রকে কিন্তু পারেনি। ডিভোর্সের কথা শোনা মাত্র তার বাবা অশোকবাবু সহ্য করে নীতে পারেননি মেয়ের সিদ্ধান্ত। সাথে সাথে স্টোক হয়ে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যান। অনেক কষ্টে ওনাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর থেকে চলে আসছে মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়ার গল্প।
হঠাৎ করে দরজার বেলটা বেজে উঠলো। অনসূয়া ইচ্ছার বিরুদ্ধে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খোলা মাত্র ভেসে উঠলো গা গুলিয়ে ওঠা মদের গন্ধ। কিছুক্ষণ সবকিছু শান্ত, তারপর মাঝ রাত পর্যন্ত ঘরের কোণায় কোণায় ভেসে বেড়ালো অনসূয়ার বেদনাদায়ক কান্না, মানুষরূপী জানোয়ারের নোংরা গালাগাল আর অজস্র হিংস্র অত্যাচার।
পরের দিন সকালে অফিস যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি চড়া মেকআপ লাগিয়ে নিল অনসূয়া। তৈরী করে নিল নিজেকে, একদম হাসিখুশি এবং সুখী মানুষ রূপে। আর ওদিকে সৌমেন্দ্র ফরমাল ড্রেসে হয়ে উঠলো সমাজের ভদ্র, সভ্য, শিক্ষিত মানুষ। ঠিক যেন মানুষরূপী জানোয়ার এর মুখোশের আড়ালে সমাজের ভদ্রলোক। আর একজন দামি মেকাপের আড়ালে সমাজের অত্যাচারিত নারী।
0 মন্তব্যসমূহ