সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির ১৩২ তম তিরোধান দিবস উদ্বোধন।।BDNews.in


গোলাম সরোয়ার, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির ১৩২তম তিরোধান দিবসের ৩দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারো শুরু হলো লালন তিরোধান দিবসের আয়োজন।

দিবসটি উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ছেউড়িয়া আখড়াবাড়িতে ১৭ অক্টোবর (১লা কার্তিক) সোমবার থেকে ১৯ অক্টোবর (৩ কার্তিক) পর্যন্ত তিন দিন ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে আলোচনা সভা ও  লালন সঙ্গীতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে লালন স্মরণোৎসব হয়। করোনাভাইরাস মহামারী কারণে এরপর থেকে আখড়াবাড়িতে সব আয়োজন বন্ধ ছিল। দুই বছর পর চলতি বছরের মার্চ মাসে আবার লালন স্মরণ উৎসব হয়।

আজ সন্ধায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ।

এ সময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন- আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ্ এর বাণী আমাকে অবাক করে দেয়। তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না তারপরেও তিনি ২০০০ এর বেশী গান লিখে গেছেন। মানবতার সেবায় তিনি ছিলেন মানবিক। তিনি মানুষের ভেদাভেদ সৃষ্টি করেন নাই। তিনি মানবতার কথা বলে গেছেন। 

দিবসটি উপলক্ষে লালন মাজারকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। কয়েকদিন আগে থেকেই ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে এসে উপস্থিত হয়েছে শতশত ভক্ত সাধু, লালন অনুসারী। তারা মাজারের ভিতরে ও লালন একাডেমির আশপাশ এলাকায় খণ্ড খণ্ড করে বসেছে লালন ফকিরের আসর। 

ভাববাদী অলৌকিক ধর্ম-সম্প্রদায়ের সাধন সংগীত স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ। চৈত্রের এক দোলপূর্ণিমার দিনে দুরারোগ্য এক ব্যাধি নিয়ে লালন সাঁইজির আবির্ভাব ঘটেছিলো ছেউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে। এর পর থেকে সাঁইজি তার জীবদ্দশায় সাধুসঙ্গ করতেন। তাই তার দেহত্যাগের পর তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এবং তার মরমি বাণীকে প্রচার করার জন্য তার অনুসারীরা এই দিনটিতে তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির ১৩২ তম তিরোধান দিবসে বিশাল এই আয়োজন।

সন্ধায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে সকালে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাউল সাধুদের সাধুসঙ্গ।

উৎসবকে কেন্দ্র করে মাজারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মাঝারের ভেতরে বসেছে বাউল ফকিরদের আসর আর কালি নদীর পাড়ে বসেছে বিশাল মেলা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন এই গ্রামীণ মেলায়। লালন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে আলোচনা সভার এবং রাতভর লালন গানের জন্য। ফকির লালন শাহের মাজারে দেশি-বিদেশি বাউল দর্শনার্থী, সাধক ভাবাবেগ আর উৎসব দর্শকের ভিড় সামাল দিতে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরা দাঁড়াও মেলার সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে।

এখানে আসা লালনের ভক্ত অনুসারীদের দাবি, সাধুর দর্শনে মনের ময়লা কেটে যায়, তাই মনের ময়লা দূর করতে সাধুর দর্শন নিতে তারা বারবার ফিরে আসেন সাঁইজির বারাম খানায়।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনায়য়ের সহযোগীতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। সাধুগুরুদের থাকা খাওয়াসহ ভক্তবৃন্দসহ জনসাধারনের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, তিরোধান দিবস উপলক্ষে দেশ বিদেশ থেকে লাখো মানুষ এখানে আসবেন। এই উৎসবে যোগদানে যাতে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় সেজন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। আছে ওয়াস টাওয়ারসহ বিশেষ কন্ট্রোলরুম। সেখান থেকে পুরো ছেউড়িয়া এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ফকির লালন সাঁইজির তিরোধান দিবস উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সাধু গুরুদের থাকা খাওয়াসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চে যেমন থাকবে আলোচনা সভা তেমনি রাতভর দেশ বরেণ্য লালন শিল্পীরা তাদের গান পরিবেশন করেন।

লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- কুষ্টিয়া ৪ আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, সাংসদ আ কা ম সরোয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী,  কুমারখালি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান খান, মেয়র শামসুজ্জামান অরুণ,  কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি বিজ্ঞ পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসির সভাপতি রাসেদুল ইসলাম বিপ্লব।

প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান। আলোচক ছিলেন-কুষ্টিয়া লালন একাডেমির খাদেম মোহাম্মদ আলী।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন,  কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত  জেলা প্রশাসক মোছাঃ শারমিন আখতার, কুমারখালি উপজেলার নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল। স্বাগত বক্তব্য দেন- এ্যাডঃ শহিদুল ইসলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ