সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

শুভ জন্মদিন - শিরিন শবনম।।BDNews.in

শুভ জন্মদিন - শিরিন শবনম।

দুপুরের পর বাড়ির সব ভাতঘুম। আমি পা টিপে টিপে খিড়কি দরজা খুলে এক ছুটে তোমার আউট হাউজের লিচু বাগানে। আমি জানি তোমাকে ঠিক এখানেই পাওয়া যাবে। এই সময়টায় তুমি বড় লিচু গাছটায় বসে পা দুলিয়ে বই পড়। আসার পথে আজ আমি কাঠ গোলাপ কুঁড়িয়ে কোচড় ভড়েছি। দুটো নিয়ে কানে গুঁজেছি। আহ কী কড়া গন্ধ!

তুমি আমাকে উপেক্ষা করতে পার না। ভাবটা ঠিক দেখাও যেন আমাকে চিনই না। আমার পায়ের শব্দ আর কাঠ গোলাপের গন্ধ তোমাকে আমার উপস্থিতি ঠিক জানিয়ে দিল। তবু ভান যেন দেখইনি। আমি কম কিসে? ডাকবো না তোমায়! জান না যে আমি ঠিক আসব? আমিও যেন জানিই না যে তুমি মগডালে বসে আছো। আমি ঠিক তোমার চড়ে বসা গাছটার গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে কাঠ গোলাপের সাথে সন্ধির বাহানায় তোমার ভান শেষ হতে দিচ্ছি।

শেষপর্যন্ত আর পারলে না। থোকা পাতা ছিঁড়ে আমার মাথায় ফেললে। আমি যেন বুঝিই না কোত্থেকে পাতা আসে! বাতাস বুঝি কাঁচা পাতা ঝরায়? তাকালাম না উপরের দিকে। তুমি তখন আর পারলে না। ধুম করে লাফ দিয়ে নেমে সামনে দাঁড়ালে। আমি কোঁচড় থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ গোলাপ তোমার হাতে দিলাম।

"শুভ জন্মদিন!"

যদিও এটা আমাদের প্রতি বিকেলের রুটিন। খেলা। অভ্যেস। কাঠগোলাপ সব সময় থাকে না। কোনো না কোনো বুনো ফুল হলেও কুড়িয়ে আনি। কিছু না পেলে গাছের সবুজ পাতা। এই রুটিন কবে থেকে গড়ে উঠেছে মনে নেই।

কিন্তু আজ ভিন্ন দিন। আজ তোমার জন্মদিন। আমি লাল রঙ পড়েছি। এই রঙটাই তোমার পছন্দ। আমি তোমার সব পছন্দের কদর করি। তুমি জানো। তবু চুল টানতে ছাড়ো না। ধুমধাম কিল ঘুসি লাগাতেও ছাড়ো না। আমি ও ছাড়ি না। কিন্তু পারি না। তোমার শক্তির সাথে। তোমার বাহুর শক্তিকে আমি কেয়ার করি না। তোমার আছে বাহুর শক্তি আমার আছে চাপার শক্তি। সমান সমান।

কিন্তু এর বাইরে তোমার আছে ভীষণ এক শক্তি। তুমি ভীষণ উদাসীন থাকতে পার। আমি একদম পারি না। ঘুরে ফিরে আবার নিজেই ফিরে আসি। শেষে সন্ধি কর, মগডালের ডাসা পেয়ারাটা আমায় এনে দিয়ে। তখন আমি আর রাগ করে থাকতে পারি না। চোখের জল মুছে ফেলে তোমায় ঘুসি দিয়ে দৌড় লাগাই। কিন্তু জানি পরদিন ঠিক একই হবে। তুমিও জানো। কিন্তু কেউ কাউকে বলি না। সব বলতে হয়? উপলব্ধির জন্য কিছু রেখে দেই।

কিন্তু আজকের বিষয়টি ভিন্ন। আজকের দিনটি ভিন্ন যে! আজ কাঠ গোলাপের গন্ধ আমাদের অঙ্গে মিশে আছে। বাইরের কাঠ গোলাপের প্রয়োজন নেই।

কাঠ গোলাপ আমার হাতের মুঠিতে দিয়ে তুমি আমার হাত ধরলে। তারপর কোনো কথা না বলে দুদ্দার দৌঁড় আমাকে নিয়ে। আমি ও তোমার সাথে হাওয়ার আগে। ছুটতে ছুটতে বাগান পেরিয়ে সবুজ ঘাসের প্রান্তর। খোলা মাঠ। আহ্ কী নরম ঘাস! পা ডুবে যাচ্ছে। আমি কী তোমার সাথে দৌড়ে পারি? হোঁচট খেলাম। তুমি তো আমাকে পড়তে দিবে না। আমি জানি। তাই আলস্যে হোঁচট খাই।

তুমি আমাকে দু'হাতে পাঁজাকোলা করে আমার পতন ঠেকালে। আমিও দুবাহু দিয়ে লতার মতো তোমাকে পেঁচিয়ে বাঁচলাম। এখন তো দৌড়ানো যাচ্ছে না! আহা দৌঁড়াতে হবেই বা কেন? কোন শর্ত নেই তো। আমরা ঘাসের উপর পড়ে গেলাম জড়াজড়ি করে। ঘাসে গড়াগড়ি খেলাম - যেন একটিই এনটিটি। আমার সর্বাঙ্গের স্পর্শ পেতে পেতে কাঠগোলাপের গন্ধ ছাপিয়ে তুমি জুঁইয়ের সুবাস পেলে। ততক্ষণে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিমের আকাশ কমলা আর লালের আভায় মাতোয়ারা। তুমি গড়ানো বন্ধ করে আমাকে ঘাসের উপরে চেপে ধরে আমার চোখে চোখ রাখলে।

তোমাকে আমি চিনতে পারছি না। এ কোন তুমি? দুষ্টুমির কোন চটুলতা নেই। গাঢ় চোখ আমার চোখে লেপ্টে নিশ্চুপ হয়ে আছো। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো তোমার বক্ষের পিঞ্জরে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। তুমি কী বুঝলে - ঝট করে আমাকে চুমু খেলে। একটি দুটি তিনটি ... কতটি? গুনতে পারিনি। মনে হলো মিলিয়ন্স কম হয়ে যাবে। এটাই তোমার প্রথম চুম্বন। এর আগে তুমি কখনো আমাকে এরকম গাঢ় চুম্বন দাওনি। এর আগে শুধু এটা সেটা নিয়ে মারই খেয়েছি। দিয়েছিও। সমান সমান যদিও পারি না।

সন্ধ্যে নামছে। রবি ডুবেছে। আবিরে ছেয়ে আছে ভুমন্ডল। আকাশ ভরে সুরের কানাকানি। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।

ভেসে গিয়েছিলাম বহুদূর দু'জনে একই সরোবরে। সাঁতার কেটে তীরে ওঠা। আবার সাঁতার আবার তীর।

দূরে প্রান্ত বেয়ে সন্ধ্যা নামছে।

আমার ভেতরটা আলোয় ঝলমল করে উঠল।

কাঠগোলাপের সাথে বেল, জুঁই, চামেলী, হাস্নহেনা, বকুল, রজনীগন্ধা আরো আরো নাম না জানা পৃথিবীর সব ফুলের গন্ধেরা মিলে উৎসবে মেতে উঠলো। দূর আকাশের গায়ে নক্ষত্রেরা আলো জ্বলা চাদরে আমাদের ঢেকে আড়াল করলো তৃণদের কাছে।

আমি ষোল তুমিও ষোল।

তোমার জন্মদিনে এই আমার বেস্ট গিফট!

"জানি হে তুমি মম জীবনে শ্রেয়তম, এমন ধন আর নাহি যে তোমা-সম"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ