সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

যে ৩ শ্রেনীর পুরুষের নামাজ কবুল হয় না।।BDNews.in


পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন → তারপর সে নামাজিদের জন্য ধ্বংস। যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে গাফিলতি করে। ( সূরা মাউন ৪-৫) আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন → হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। ( সূরা মুনাফিকূন ৯)


এ আয়াতে আল্লাহর স্বরণ বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে বুঝানো হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য, খেত-খামার এবং পরিবার -পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর ব্যস্ততার দরুন যথাসময়ে নামাজ আদায় করে না সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।


রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন → কিয়ামতের দিন প্রথমেই বান্দার আমল সমূহের মধ্যে নামাজের হিসাব নেয়া হবে। নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে থাকলে পরিত্রাণ পাবে নচেৎ ব্যর্থতা অবধারিত। ( আবু দাউদ ৮৬৪,তিরমিজি ৪১৩,৪৬৫ ইবনে মাজাহ ১৪২৫ মুসনাদে আহমদ ৭৮৪২ দারেমি ১৩৫৫)


একদা এক মসজিদে তিন বন্ধু একসাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামায়াতে নামাজ পড়ছিল। তাঁরা নামাজে মনোযোগী হওয়ার চেয়ে আশেপাশে কে কি করছে এবং দুনিয়ায় কথা বেশি চিন্তা করতে ব্যস্ত।


তাঁদের মধ্যে প্রথম একজন তাঁর দোকানের আজকের বেচা বিক্রির কথা ভাবছিল এবং এক পর্যায়ে মনের ভুলে খানিকটা বিড়বিড় করে শব্দ করে কথা বলে উঠলো। তো তাঁর পাশে থাকা দ্বিতীয় বন্ধু তাঁকে বলছে বন্ধু নামাজের মধ্যে কথা বলিস কেন! নামাজের মধ্যে কথা বললে নামাজ হয় না। এ কথা শুনে তৃতীয় বন্ধু (তখন নামাজ অবস্থায়) বলছিল, ভাগ্যিস ওদের দুজনের সাথে কথা বলিনি! তাহলে তো আমার নামাজ হতো না!


তো প্রিয় পাঠক এই তিন বন্ধুর গল্প থেকে কি বুঝলেন..? আদৌতে ওদের তিন জনের একজনেরও কি নামাজ হয়েছে..? এটি একটি গল্প হলেও বাস্তবেও কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা ভাবেন যে তাদের ইবাদত পরিপূর্ণ ভাবে আদায় হচ্ছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারাও একই ভুল করে তাদের ইবাদতের উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং ইবাদতের উদ্দেশ্য নষ্ট হচ্ছে।


তাই তারা তাদের নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল করিয়ে নিতে পারছেনা। আবার তারা এও বুঝচ্ছেনা কি জন্য তাদের ইবাদত কবুল হয়না৷ যার কারণে পরকালে তাদের ইবাদত ব্যার্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। আজ আমরা আলোচনা করবো যে তিন শ্রেণীর নারী ও পুরুষ নামাজ কবুল হয় না। তো চলুন জেনে নেই।


এক নাম্বার হলোঃ যে নামাজী ব্যক্তি নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ চুরি করে।অর্থাৎ দায় সারা ভাবে নামাজ পড়ে। ঠিকমতো রুকূ সিজদাহ করে না। রুকূতে স্হির হয় না সিজদায় স্হির থাকে না। কোমর বাঁকানো মাত্র তুলে নেয়। তাড়াহুড়ো করে দুআ পড়ে চটপট উঠে যায়। কোমর ঠিকমতো বাঁকে না। মাথা উঁচু করেই রুকূ করে। কারো সিজদার সময় নাক মুসাল্লায় তথা জমিনে স্পর্শ করেনা। কারো পা দুটি উপর দিকে পাল্লায় হাল্কা হওয়ার মত উঠে যায়। কেউ রুকূ ও সিজদার মাঝে স্হির হয়ে দাঁড়ায় না। হাফ দাঁড়িয়ে সিজদায় চলে যায়।

মহানবী (সাঃ) বলেন → হে মুসলিম দল! সে ব্যক্তির নামাজ হয়না যে ব্যক্তি রুকূ ও সিজদাতে নিজ পিঠ সোজা করেনা ( আহমদ, মুসনাদ,ইবনে মাজাহ, সুনান ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহিহ তারগিব হাদিস নাম্বার ৫২৪)


তিনি আরো বলেন → আল্লাহ সেই বান্দার নামাজের দিকে তাকিয়েও দেখেনা, যে রুকূ ও সিজদার মাঝে নিজ পিঠকে সোজা করে ( দাঁড়ায়) না ( আহমাদ, মুসনাদ ৪/২২, ত্বাবারানী, সহিহ তারগিব ৫২৫,সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী হাদিস নাম্বার ২৫৩৬)


রাসূলে পাক (সাঃ) আরো বলেছেন → মানুষ ৬০ বছর ধরে নামাজ পড়ে অথচ তার একটি নামাজ ও কবুল হয়না কারণ হয়তো বা সে রুকূ পূর্ণরূপে করে কিন্তু সিজদাহ পূর্ণভাবে পূর্ণ করে না। অথবা সিজদাহ পূর্ণরূপে করে কিন্তু রুকূ ঠিকমতো করেনা ( আসবাহানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী হাদিস নাম্বার ২৫৩৫)


তিনি আরো বলেন → নামাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এক তৃতীয়াংশ পবিত্রতা, এক তৃতীয়াংশ রুকূ এবং আর এক তৃতীয়াংশ হল সিজদাহ্। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থরূপে আদায় করবে তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবে এবং তার অন্যান্য সমস্ত আমলও কবুল করা হবে। আর যার নামাজ রদ করা হবে তার অন্য সকল আমলকে রদ্দ করে দেওয়া হবে। ( বাযযার সিলসিলাহ সহীহাহ, আরবানী হাদিস নাম্বার ২৫৩৭)


অর্থাৎ আমাদের নামাজ পরিপূর্ণ ভাবে ধীরস্থির ভাবে সম্পন্ন করতে হবে। দোয়া কিরাত এবং সূরাতে তাড়াহুড়ো না করা, রূকুতে তাড়াহুড়ো না করা। এবং সিজদা পরিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করা।


দ্বিতীয় নাম্বার হলোঃ যে তার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার নামাজ কবুল হয় না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন→ তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার এক বিঘত ওপরেও ওঠেনা ( অর্থাৎ কবুল হয়না) ১. যে ব্যক্তি জনগণের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করে। ২. যে নারী তার স্বামীর অসন্তুষ্টিসহ রাত যাপন করে এবং ৩. পরস্পর সম্পর্কে ছিন্নকারী দুই ভাই। ( ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বার ৯৭১)


এখানে ইমামতি বলতে শুধু নামাজের ইমামতিকেই বুঝানো হয়নি। ইমামতি দ্বারা নেতৃত্বকেও বুঝানো হয়। কারণ ইমাম অর্থ নেতা। যেমন আপনি যদি অফিসের বস হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অধঃস্থিত যারা কাজ করে তারা যেন আপনার আচরণে সন্তুষ্ট থাকে, আপনি যদি সমাজের নেতা হন তাহলে লোকেরা যেন আপনার নেতৃত্বে খুশি থাকে ইত্যাদি।


আবার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বলতে শুধু ভাইয়ের সাথে নয় আত্নীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাও বুঝিয়ে থাকে। ইসলামে নিঃসন্দেহে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে হাদিসে অসংখ্য দলিলে আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার প্রতি নির্দেশ হয়েছে।


যে সব দলিল আমাদের মহান শরিয়তে এ বিষয়টির মহা মর্যাদার প্রমান বহন করে। কারণ ইসলাম শরিয়ার মহান উদ্দেশ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে —- মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও মেল বন্ধন টিকিয়ে রাখা।


আল্লাহ তায়ালা বলেন → এবং যারা আল্লাহ যা সংযুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা সংযুক্ত রাখে।( অর্থাৎ আত্নীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে) নিজেদের প্রভুকে ভয় করে ও কঠিন হিসাবের আশংকায় থাকে ( তারাই সফলকাম হবে)। ( সূরা আর-রাদ আয়াত ২১)


মানুষ যদি আত্নীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ কী তা ভেবে দেখে তাহলে দেখতে পাবে যে এ ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ায় তুচ্ছ স্বার্থই এর কারণ, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে যার কোন মূল্য নেই। কিংবা এর কারণ হচ্ছে ____ তাদের মাঝে শয়তানের প্ররোচনা। শয়তান হীন সব কারণে তাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরি করে যে সব কারণে ভ্রুক্ষেপ করার মতো কিছুই নয়।


এমন কি সম্পর্ক ছিন্ন করার যথাযথ কারণও যদি থাকে তারপরেও ইসলামী শরিয়া সম্পর্কে রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেয়। এবং ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া মাফ করে দেয়া ক্ষমা করে দেওয়া ও সহনশীল হওয়ার প্রতি মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করে ভুলের পিছে লেগে থাকার ও হিংসা বিদ্বেষ যেন জিইয়ে না রাখে সেটার প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে।


হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন → এক ব্যক্তি বলল ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কিছু আত্নীয় আছে আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলি কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি তারা আমার সাথে দুব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে সহিষ্ণু আচরণ করি তারা আমার সাথে মূর্খের মতো আচরণ করে।


তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন → যতক্ষণ তুমি এর উপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে আল্লাহ পক্ষে থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে। অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারন করে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে যেতে বলা হয়েছে। ( সহিহ মুসলিম (২৫৫৮) সহিহ বুখারী ( ৫৯৮৭)


রাসূল (সাঃ) আরো বলেন → সম্পর্ক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি নয় যে ব্যক্তি অন্যে সম্পর্ক রক্ষা করলে তারপর সম্পর্ক রক্ষা করে বরং ঐ ব্যক্তি হল সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে। ( সহিহ বুখারী হাদিস নাম্বার ৫৯৯১)


হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রেখে থাকেন। এর কারণ কি…?


তিনি বলেন → আল্লাহ তায়ালা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন পরস্পর সম্পর্কে ছিন্নকারী দুই ব্যক্তি ব্যতিত প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করেন। তিনি ( ফেরেশতাদের) বলেন,তারা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া অবধি তাদের ত্যাগ করো। অর্থাৎ যদি আপনার আত্নীয় স্বজনদের সাথে আপনার দ্বন্ধ ফ্যাসাদ থাকে, মনোমালিন্য মিটিয়ে না ফেলছেন তাদের সাথে ভুল বুঝাবুঝির অবসান না করছেন এবং তাদের যতক্ষণ না ক্ষমা করছে ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করবেন না। ( ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বার ১৭৪০)


তিন নাম্বার হলোঃ একনিষ্ঠ ইবাদত না করে লোক দেখানো ইবাদতকারীর নামাজ আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন → তাদের কেবল একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ( সূরা বাইয়িনাহ আয়াত ৫)

ইবাদত বাহ্যিক ত্রুটি হলো তা রাসূলে পাক (সাঃ) এর সুন্নত অনুযায়ী না হওয়া ইবাদতের পূর্বশর্ত পূরণ না করা। আর ইবাদতের অব্যন্তরীণ ত্রুটি হলো নিয়তের অসততা। তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিত অন্য কোনো উদ্দেশ্য ইবাদত করা।


যেমন — মানুষের প্রশংসা, সামাজিক প্রভাব -প্রতিপত্তি, কারো দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি মোহে ইবাদত করা। ইসলামী পরিভাষায় একে রিয়া বলে এবং বাংলা ভাষায় লোক দেখানো বা প্রদর্শনপ্রিয়তা বলা হয়। এবং ইংলিশে যাকে Show up বলা হয়।


প্রর্দশন প্রিয়তা হলো নিয়তের অসততা যা ইবাদতকে মূল্যহীন করে দেয়। নিয়ত ঠিক না হলে আল্লাহর কাছে বান্দার কোনো কাজই গ্রহনযোগ্য নয়। নিয়ত শুদ্ধ হলে আল্লাহ জাগতিক কাজকে ইবাদতের মর্যাদা দান করেন। আবার নিয়ত শুদ্ধ না হলেও ইবাদতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেন।


রাসূল (সাঃ) বলেছেন → বান্দার সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়ত অনুসারে তার বিনিময় পাবে। ( সহিহ বুখারী হাদিস নাম্বার ১) অর্থাৎ কাজের ফলাফল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল৷


আশাকরি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ