সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

রক্তচরিত্রের জীবাণু হু হু করে ছড়ায়, ভয়াবহ সেই রূপ।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ “আবে মাদারি ই ই ই …” প্রচণ্ড রাগে ট্রিগার টিপে দিতেই মৃত্যুর ঠিকানা লেখা একঝাঁক গুলি কারো গলায়, কারো বুকে, কারো পেটে ঢুকতে শুরু করল। তারপর রক্তাক্ত পরিস্থিতি।

তারপর?

লোকগুলোর মুখ ঢেকে রাখা ছিল গামছা দিয়ে। হাতে বন্দুক-কাট্টা। একসময় তারা এলো। তারপর শুরু তীব্র জিঘাংসার গুলির ঝড়। যে উঁচু জাতের ছায়া ছুঁলে অচ্ছুত হতে হয়, তারাই তখন মৃত্যুর ভয়ে কেঁচো।

তারপর?

গঙ্গা-গোমতীর তীরে তীরে পুড়ে যাওয়া চিতার উপর এক ঘটি জল ঢেলে অস্পষ্ট স্বরে কেউ একজন বলত  ‘বদলা’। তার বদলা নেওয়ার তীব্র আকাঙ্খায় গ্রামের পর গ্রামে মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকে।

তারপর?

ফের বদলা। আবার বদলা। চলতেই থাকে এই চক্র। অলক্ষ্যে রক্তচরিত্র অট্টহাসি করে। তার নিয়ন্ত্রণে তখন মানুষ। ঘুমন্ত এই চরিত্র জেগে গেলে ভয়াবহ রূপ। অচিরেই তার শাখা ডালপালা মেলে ধরে। সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রক্তচরিত্রের জীবাণু হু হু করে ছড়ায়।

বিহার।

এই ভূমি আসলে বদলা নেওয়ার মাটি। মানুষের স্বাভাবিক, চিরন্তন চরিত্রের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকে রক্তচরিত্র। বিহারের মাটি এই অদ্ভুত জিঘাংসাময় চরিত্রের উর্বর ভূমি। তবে এতে যে রাজনীতি জড়িত, তার জন্মস্থল পশ্চিমবঙ্গ। নীরবে নিভৃতে যে সমাজ বদলানোর সলতে পাকানো হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। পথ খুঁজে না পেয়ে নীরবেই সেই রাজনীতি আশ্রয়স্থল খুঁজে নেয় বিহারকে। এর সঙ্গে জড়িয়েছে দশকের পর দশক ধরে চলে আসা সামন্তবাদ রাজনীতি। তার বিরুদ্ধে জমতে থাকা ক্ষোভের রাজনীতি। গণআন্দোলন। একটার পর একটা দশক ধরে এই পরম্পরা চলেছে।  এই সব নিকশ কালো রাতগুলোর কথা বারবার সংবাদপত্র, রেডিওতে এসেছে। আরও হয়ত আসবে। জমিদার বনাম ক্ষেতমজুর কৃষকদের সংঘর্ষের পথ ধরে রাজনীতির মারাত্মক সব মুহূর্তের একেকটা শিউরে ওঠা ঘটনার কথা লিখছি। গণহত্যার রাজনীতি। রোটি-চাপাটির অধিকারে দলিত-ব্রাহ্মণ উঁচু-নিচু জাতের পারস্পরিক সংঘর্ষের কেন্দ্র বিহার।  ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসকে বারবার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই রাজ্যের কথা লিখতে গিয়ে কখনও মনে হয়েছে হাঁ ম্যায় হুঁ বিহারি !

আমি বিহার: ” अजी हाँ! बिहार हूँ मैं “

এই সহস্রাব্দের শুরুতেই অর্থাৎ ২০০০ সালে বিহার কেটে ঝাড়খণ্ড তৈরি হয়। গণহত্যার শিউরে ওঠা পর্বগুলোর সঙ্গে আঠালো রক্তের মতো লেগে থাকা রাজনীতি স্বাভাবিকভাবেই অখণ্ড বিহার ভিত্তিক। তবে ঝাড়খণ্ডী-বিহারি কানফুসফুসানি এখনো কমেনি,  বরং লিট্টির মধ্যে ধনিয়া আচারের মতো ছড়িয়ে আছে। গুজুর-গুজুর, ফুসুর-ফুসুর করে গরম চায়ে মোটা দুধের সর যদি নাই চাখলেন তা হলে আর বিহার কী বা ঝড়খণ্ড কী তা বোঝা মুশকিল। ভাঁড় ভাঁড় এমন চা গিলে আমি শুধু ছুঁতে পেরেছি মাত্র। বোঝা দূর কি বাত। স্বীকার করতে দোষ নেই।  ভাগ্গিস চেখেছিলাম, তাই  পাটনা থেকে রাঁচি পর্যন্ত এইসকল হুজুরের গুজগুজানি ধরতে পারি একটু আধটু। এমন মানুষ তো লাখে কেন কোটিতে একটি বা আধটি হন। এনাদের ছেড়ে রাখো বা বন্দি করো কুছ পরোয়া নেই। শুধু কখন ঘেঁটে দিতে হবে, তার অংকে পিএইচডি করে এসেছেন। এনারা সব ‘ছায়ামানুষ’। কয়েকজন জীবন্ত কিংবদন্তি। কিছুজন ভবলীলা শেষ করে দুধের চায়ে খয়েরি সরের মতো জমে আছেন। এর বাইরে বাকিরা রঙিন অথবা সাদা-কালো চরিত্র নিয়ে হাজির। এই অদ্ভুত  ছায়ামানুষদের কথা বলব।

কৈফিয়ৎ

এই ধারাবাহিকে জাত ভিত্তিক রাজনীতির অন্দরমহল থেকে উঠে আসা সবকটি নাম বাস্তব। সবকটি ঘটনা বাস্তব। কল্পনা নেই। গল্প নেই। এই ধারাবাহিকে আছে সেই মাটির কথা। রোটি-চাপাটি আর লিট্টির কথা। পাটলিপুত্র, মগধ, বৈশালী, মিথিলা সংস্কৃতির হাজার হাজার বছরের গৌরবময় ভূমি সিংহনাদে কেঁপেছে বারবার। ভারত শিহরিত হয়েছে। বিশ্ব চমকেছে। তবে সেই ভূমির এই কথায় নেই ঢাল, নেই তলোয়ার। তা বলে কেউ নিধিরাম সর্দার নয়। আছে বন্দুক। এক-নলা, দো-নলা বন্দুক।  সেই সূত্র ধরেই  ‘পাটলিপুত্রের যুদ্ধ’ ধারাবাহিকে রক্তচরিত্রের সন্ধান করছি।

আচ্ছা ‘কাট্টা’ মানে কতজন জানেন ? বেশিজনের না জানারই কথা।                                    (চলবে)

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ