সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

খালেদা জিয়ার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল, তবে সুস্থ নন।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ আপাত দৃষ্টিতে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়া আপাতদৃষ্টে স্থিতিশীল আছেন। তবে শিগগিরই আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন না এমন নিশ্চয়তা নেই।

৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত–চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছর এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বাসায় ফেরেন।

তবে এরপর কয়েক মাস না যেতেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বছর ১৩ নভেম্বর তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ কিছুদিন আইসিইউতে রেখে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা অনেকবার নেত্রীর জীবনাশঙ্কা প্রকাশ করে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে বিএনপি নেতাদের ওই আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার।

টানা ৮১ দিন চিকিৎসার পর আজ সন্ধ্যার পর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া। তিনি বাসার উদ্দেশে যাত্রা করার আগে সন্ধ্যা সাতটার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের ১১তলার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চিকিৎসকেরা। সেখানে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি খালেদার চিকিৎসায় সম্পৃক্ত বিএনপিপন্থী চিকিৎসকেরা ছিলেন।

বিএনপি নেত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে করোনার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন তার চিকিৎসক ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে উনি যদিও স্ট্যাবল আছেন, এখন দেখতে পাচ্ছি, সারা দেশে এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার সংক্রমণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালে প্রায় ৩৮০ জন পেশেন্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

‘এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ওনার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই মুহূর্তে ওনার কন্ডিশন যেহেতু কিছুটা স্ট্যাবল আছে, ওনাকে বাসায় রেখে আমাদের তত্ত্বাবধানে ওনার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। না হলে এই সংক্রমণ যদি আবার কোনো জটিলতা সৃষ্টি করে, তাহলে এর ম্যানেজমেন্টটা জটিল ও কঠিন হয়ে যাবে।’

খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছে বিএনপি। তার জীবন সংকটাপন্ন, মুমূর্ষু বলে জানানো হয়েছে, তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, তার প্রধান অসুখ লিভার সিরোসিস। এর চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।

হাসপাতাল থেকে মুক্তির আগে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানান কী ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, ১৩ নভেম্বর বিএনপি নেত্রীর খাদ্যনালির ওপরের অংশে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেটির চিকিৎসা হয়েছিল ১৪ তারিখে। ৬টা ব্যান্ডিং করা হয়েছিল। তারপরে ২৩ তারিখে ওনার আবার বড় রকমের রক্তক্ষরণ হয়। সেটি প্রচলিত এন্ডোস্কপ করে বন্ধ করা যায়নি। তখন ‘ক্যাপসুল এন্ডোস্কপ’ নামে একটি যন্ত্র বিদেশ থেকে আনিয়ে ২৪ ডিসেম্বর রক্তক্ষরণের উৎসটা বের করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি সেই বিশেষ এন্ডোস্কপি করা হয়।

এরপর আপার চেম্বারে আরও ৫টি ব্যান্ড দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়।

লিভারে সংক্রমণের কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলে জানান অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘খুব ছোট আকারে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি আপাতদৃষ্টে স্থিতিশীল আছেন। তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে অদূর ভবিষ্যতে আবারও রক্তক্ষরণ হবে না।’

খালেদা জিয়ার টিউমার কেটে বাদ দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক। বলেন, এই চিকিৎসাও শেষ করা যায়নি। লিভারের রক্তক্ষরণ ও টিউমারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার পরামর্শও দেন এই চিকিৎসক।

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ