সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

নতুন হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা প্রতিবন্ধী রমজান।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী রমজানের (১৭) হাতে একটি হুইল চেয়ার তুলে দিলেন সমাজকর্মী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও শাহবাজ খান সানি। আর এই হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পিতৃহারা প্রতিবন্ধী রমজান।

জানা যায়, জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের চর- বেলতৈল গ্রামের দরিদ্র কৃষক মৃত আক্তার মোল্লার বড় ছেলে রমজান (১৭)। স্বল্প উপার্জনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ছেলে রমজানের ভরণ পোষণে কমতি ছিল না।

গত ৩ বছর পূর্বে রোগে ভুগে রমজানের পিতা আক্তার মোল্লা মৃত্যু বরণ করেন। তারপর থেকেই দারিদ্র্যতার কষাঘাতে ভুগতে থাকে পরিবারের বড় ছেলে প্রতিবন্ধী রমজান ও তার পরিবার। ছোট ভাই, বোন ও মায়ের মুখে আহার তুলে দিতে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।

নিজে ভিক্ষাবৃত্তি করে এবং তার মা নাজু বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে সংসার চালায় তারা। এই দারিদ্রতার মধ্যেও রমজান তার ছোট ভাই ইসমাইল (১২) ও বোন মরিয়ম (১০) কে পড়ালেখা করাচ্ছেন, ইসমাইল স্থানীয় একটি স্কুলের যষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ও মরিয়ম পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় রমজানকে চোখে পরে স্থানীয় সমাজকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের। রমজানের বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন।

বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকের মতো নজরে আসে শাহজাদপুরের মানবিক মানুষ ও স্থানীয় ব্যাবসায়ী একতা গিফট কর্ণারের স্বত্বাধিকারী শাহবাজ খান সানির। তিনি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে তার প্রতিষ্ঠিত আব্দুল লতিফ খান ও রাজিয়া সুলতানা খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি হুইল চেয়ার প্রদানের আশ্বাস দেন।

এরই মধ্যে আরও চারজন ব্যাক্তি প্রতিবন্ধী রমজানের জন্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিকাশ নাম্বারে ১৩ হাজার ১০০ টাকা প্রদান করেন।

গত ৩১ জানুয়ারি সোমবার আব্দুল লতিফ খান ও রাজিয়া সুলতানা খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি নতুন হুইল চেয়ার নিয়ে রমজানের বাড়িতে উপস্থিত হন প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও শাহবাজ খান সানি। নতুন হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে রমজানসহ তার পুরো পরিবার।

আব্দুল লতিফ খান ও রাজিয়া সুলতানা খান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শাহবাজ খান সানি বলেন, রমজানের এরকম জীবন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক ওয়ালে দেখে আমি ভীষণ কষ্ট অনুভব করেছি। আমার বাবা ও মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে, রমজানকে হুইল চেয়ার দিতে পেরে নিজেও খুব আনন্দ অনুভব করছি।

উল্লেখ্য, ব্যাবসায়ী শাহবাজ খান সানি বেশ কয়েক বছর যাবৎ তার বড় বোন নার্গিস মান্নানের অর্থায়নে উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ঈদ সামগ্রী, কম্বল বিতরণ, করোনা মহামারির সময় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, গৃহহীনদের মাঝে এখন পর্যন্ত ৯টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন এবং ৩টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে, টয়লেট নির্মাণ, মসজিদ ও মাদ্রাসায় সুপেয় পানির জন্য সাব-মার্সিবল পাম্প, টিউবওয়েল স্থাপন করে দেওয়া সহ প্রভৃতি সামাজিক কাজ করে থাকেন।

এই বিষয়ে জনদুর্ভোগ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছা সেবক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন আমি সবসময় অসহায় মানুষ ও জনদুর্ভোগ নিয়ে কাজ করে থাকি। আমি গত ২৫শে জানুয়ারি বেলতৈল বাজারে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন রমজানকে হামাগুরি দিয়ে ভিক্ষা করতে দেখি। তার সাথে কথা বলে জানতে পারি যে তার ব্যবহৃত হুইল চেয়ারটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভেঙে রয়েছে তাই সে বাধ্য হয়েই ছোট ভাই ও বোনের মুখে অন্য যোগাতে হামাগুরি দিয়েই ভিক্ষা করছে।

পরে তার একটি হুইল চেয়ারের আবদারের কথা ফেসবুকের মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করি। বিষয়টি দেখেই সানি ভাই আমাকে হুইল চেয়ার প্রদানে কথা জানায়। আরও ৪ জন ব্যাক্তি ১৩ হাজার ১০০ টাকা আমার বিকাশ নাম্বারে পাঠায়। হুইল চেয়ার রমজানের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যারা রমজানের জন্য সহযোগীতা করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রাপ্ত টাকা ও আরও কিছু টাকা মিলিয়ে আমি রমজানের পরিবারকে সহযোগীতার লক্ষ্যে একটি গাভী দেওয়ার চেষ্টা করছি, এজন্য ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাই তিনি দেশের মানুষের ও প্রবাসীদের সহযোগীতা কামনা করেছেন। সহযোগীতার অর্থ (০১৮৭৪–৩৯৬১৫৮ বিকাশ) নাম্বারে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ