সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

খাদ্যমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই, চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ
প্রতিশ্রুতি রাখছেন না কুষ্টিয়ার চাল ব্যবসায়ীরা। খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সামনে কেজিতে দুই টাকা করে চালের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কুষ্টিয়ার বাজারে এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। পূর্বের নির্ধারিত দামেই কুষ্টিয়ার খুচরা ও পাইকারী বাজারে সব ধরণের চাল বিক্রি হচ্ছে। বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আপাতত চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা তাঁরা দেখছেন না।

এদিকে খাদ্যমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করলেও এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। চাল কিনতে গিয়ে হাসফাঁস করছেন সাধারণ ক্রেতারা। রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে কুষ্টিয়ার বড় বাজার এবং পৌর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বাজারে সব ধরণের চাল বিক্রি হচ্ছে। বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা যে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রেখেছেন তাতে দেখা যায়, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো মিনিকেট চাল খাজানগর মিল গেট থেকে ক্রয় দেখানো হচ্ছে ৬৩ টাকা।

আর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। সাধারণ মিনিকেট চাল ৬১ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাজললতা চাল ৫৫ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়, কাজললতা সাধারণ ৫০ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো বাসমতি চাল ৭৩ টাকা ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়, সাধারণ বাসমতি চাল ৭০ টাকা ক্রয় করে ৭২ টাকা কেজি, কাটারী ভোগ চাল ৬৮ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, নাজির শাইল চাউল ৭২ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো মোটা আঠাশ চাল ৪৪ টাকা ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৬ টাকায় এবং পোলাও চাল ৯৮ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
এর আগে গত ২০ মার্চ অবৈধ মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকির বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ সময় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কাল থেকে চালের দাম বেড়ে যাওয়াতো দূরের কথা, যদি দাম না কমে আমাদের ভালো কথা বলা প্রশাসন অতো ভালো থাকবে না। খাদ্য নিয়ে কোনো অবস্থাতেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেছিলেন, যথেষ্ট লাভ করেছেন, আর নয়। রমজান উপলক্ষে লাভ নয়, বরং ছাড় দিয়ে বিক্রি করাটাই উচিত।

ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত চার জেলার জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ‘প্রত্যেকটা মিলের স্টক খতিয়ে দেখবেন। আজকেই ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাবেন। তদারকি ও মনিটরিং বাড়াতে হবে। মিল মালিকরা প্রতিদিন কার কাছে বিক্রি করছে, কতটুকু বিক্রি করছে তার হিসাব জেলা প্রশাসককে দিতে হবে। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনই দিতে হবে।’

বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রীর অনুরোধে বাংলাদেশ চাল কল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশীদ ওই দিন থেকেই মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা করে কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রীর কাছে দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি প্রদানের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়ার বাজারে এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। পূর্বের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরণের চাল। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে চালকল মালিক সমিতির নেতারা কেজি প্রতি দুই টাকা চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা তো কুষ্টিয়ার খাজানগর চালের মোকাম থেকে আগের রেটেই চাল কিনছি। তাহলে দাম কিভাবে কমবে?

এ ব্যাপারে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর কাছে দাম কমানোর যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার অংশ হিসেবে ওই দিন থেকেই খাজানগর মিলগেটে চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ মিনিকেট চাল আগে ৫০ কেজি পাইকারী ৩১০০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। ওই দিন (২০ মার্চ) থেকে বস্তা প্রতি ১শ টাকা কমিয়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ মিল গেটে প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৬০ টাকা কেজি। চালের দাম কমানোর ঘোষণার পর আমরা মিলগেটে দাম ২ টাকা কমিয়ে ৬০ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছি।

খাজানগর মিলগেটে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা কমলেও কুষ্টিয়ার বাজারে পূর্বের মত বেশি দামে কেন চাল বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে চালকল মালিক সমিতির এই নেতা দাবি করেন দীর্ঘদিন ধরেই কুষ্টিয়ার চালের বাজারে প্রশাসনের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। খুচরা বাজারে প্রশাসনের কোন তদারকি না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে চাল বিক্রি করে আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে চালকল মালিক সমিতির নেতা ও ব্যবসায়ীরা চালের দাম প্রথমে এক টাকা পরবর্তীতে কেজি প্রতি দুই টাকা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি প্রদানের পরও বাজারে কেন চালের দাম কমছেনা এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ