সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

কেমন মা চাই - তহমিনা খাতুন।।BDNews.in


আপনি কি পৃথিবীতে নতুন ? হুম, জন্মের পরে সব শিশুর কাছেই পৃথিবীটাকে নতুন মনে হয়। শিশুর প্রথম এবং সবচেয়ে কাছের শিক্ষক হন তার মা। বাবাও অনেক সময় বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কোন কিছুর সাথে যেমন তুলনা করা যায় না, ঠিক তেমনি কোন কিছুর মাধ্যমে পরিমাপ করাও যায় না আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই শিশুরা খুব অনুকরণ প্রিয় হয়ে থাকে। সেইসাথে প্রিয়জনদের কাছে থেকে শেখা বিষয়গুলো তারা মনেও রাখে বেশি এবং এগুলোই তাদের কাছে সঠিক বলে মনে হয়। 

আমরা আদর্শ সন্তান কথাটির সাথে যতটা পরিচিত; আদর্শ বাবা-মা কথাটি ততটাই অপ্রচলিত। তবে এ কথাটির গভীরতা অনেক বেশি। সন্তানকে আদর্শবান হিসেবে দেখতে চাইলে আগে বাবা-মাকে আদর্শবান হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে সন্তানদের সামনে এবং এটা খুবই জরুরী। আদর্শ বাবা-মা হতে যা করবেন -

১. বাসায় একাধিক বাচ্চা থাকলে একজনের সামনে অন্যজনকে বেশি আদর করা উচিত নয়। এতে যাকে কম আদর করা হচ্ছে তার মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি হতে পারে, যা তাকে পরবর্তীতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করবে। আবার দু'জনের মধ্যে যে পড়াশোনায় খারাপ তাকে অন্যজনের সাথে তুলনা করা ঠিক নয়, এর ফলে যে দূর্বল তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের যে ঘাটতি দেখা দেয় তা কক্ষনো ফিরে আসে না। সবচেয়ে বড় কথা এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে রেষারেষির সৃষ্টি হয় তা ভবিষ্যতে এসব ভাইবোনের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

২. একজন মা সন্তানকে উৎসাহ দিয়ে অনেক কিছু শেখাতে পারেন বা তার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন। আবার অতি আদর দিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেও পারেন। অতি আদর যত্নের ফলে সন্তান পরিশ্রমী হয় না, যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে। বাচ্চা বায়না করছে আর আপনি অতিরিক্ত ভালোবেসে সেগুলো মেটাচ্ছেন।যখন যা চায় আপনি কিনে দিচ্ছেন। তা হয়তো ঠিক নয়। প্রয়োজন আর অপ্রয়োজনের তফাৎটা ওকে বুঝতে শেখান। এতে ওর মূল্যবোধ কমবে না বরং বাড়বে। 

৩. অনেক মা সন্তানকে স্বার্থপর করে গড়ে তোলে, পাশের জন বা ক্লাসমেটকে কটুকথা বলে। ছলে, বলে, কৌশলে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তবে বাবা মাও মানুষ এবং তাদের জ্ঞানেরও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সত্যি বলতে সব বিষয়ে তাদের পাণ্ডিত্য থাকবে না। সন্তান সবার সাথে মিশে ভালোটা গ্রহণ করার মতো পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব বাবা মায়ের।

অনেক মানুষ আছেন যারা মনে করেন নিজে ঠিক, নিজের ধারণা ঠিক, বাকি সবাই ভুল। নিজেকে সেরা ভাবার এই অসুখ অনেক বাবা-মায়ের মধ্যেও থাকে। ফলে তারা বাচ্চাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিতে দেন না। অন্য মানেই খারাপ, অন্যের সংস্কার খারাপ, খাবার খারাপ, পরিবেশ খারাপ- এই ধরনের ভুল শিক্ষা বাচ্চাদের দিয়ে থাকেন। 

এর ফলে সন্তান অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না। বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক ভালো হয় না। বন্ধুহীন, অসামাজিক জীবে পরিণত হয়। সবসময় অন্যকে ঠকিয়ে নিজে ভালোটা ভোগ করার চেষ্টায় মত্ত থাকে।

৪. "তোমার বন্ধু কতকিছু পারে", "ক্লাসে ফার্স্ট হয়", " পাশের বাসার ছেলেটা বৃত্তি পেয়েছে", "তুমি কিছু পারো না", " তোমার মাথায় বুদ্ধি কম"- এসব কথা বলা অনুচিত। এতে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়। এসব নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ম্যানিপুলেট হয়ে সে ভাবতে শুরু করে যে, সে আসলে কিছুই পারে না। এর ফলে জানা জিনিসও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। এভাবে অধৈর্য না হয়ে বরং বাচ্চাকে শান্তভাবে বোঝানো উচিত। এতে বাচ্চারা উৎসাহ পাবে।

আবার সবসময় যারা ক্লাসে ফার্স্ট হয় বা নম্বর বেশি পায় তারায় কেবল জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে- এই ধারণা ভুল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে যারা সাধারণ রেজাল্ট করেছিল তারাও ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ফার্স্ট বা সংখ্যার পেছনে ওকে দৌড় না করিয়ে ওর যেন সঠিক জ্ঞান বাড়ে, ভালো মানুষ হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। জোর করে খেলতে না দিয়ে, বন্ধুদের সাথে কথা বলা বন্ধ করিয়ে, কারফিউ জারি করে বাচ্চার ছেলেবেলা কেড়ে নিবেন না। তারচেয়ে সব বিষয়ের গুরুত্ব কতটা তা ধীরে ধীরে বোঝান, তাতে ও নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে কখন কোথায় কতটা সময় দেবে। 

৫. বাচ্চা ভুল করলে মা-বাবা অবশ্যই শাসন করবেন, কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় নয় যা থেকে তার মধ্যে ভয় তৈরি হয়। আপনাকে বেশি ভয় পেলে কখনো সমস্যায় পড়লে হয়তো ভয়ের কারণেই সব কথা শেয়ার করবে না। আর এর ফলে বড় বিপদও ঘটতে পারে, যা আপনি জানতে পারবেন না। ফলে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করলে যে কোন সমস্যায় বাচ্চা সাহস পাবে এবং আদর্শ অভিভাবক ভেবে ভরসাও করতে পারবে। 

৬. সংসার মানেই সেখানে পারিবারিক বিতর্ক থাকবেই। কিছু মা বাবা আছেন চিৎকার করে গলাবাজি করতে পছন্দ করেন, তিলকে তাল বানায়, সন্তান ও এলাকার মানুষ জড়ো করেন, কটুকথা বলেন, মিথ্যা কথা বলে বা গালিগালাজ করে। এ ধরনের অভ্যাস মোটেও কাম্য নয়। এর ফলে সন্তান সেটা শিখে এবং স্কুলে বা অন্য মানুষের সামনে বলা শুরু করে।

৭. মা বাবা নিজেদের অবশ্যই পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং সন্তানদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহী করবে। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালের জন্য উপযুক্ত পোশাক নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। আবার বাসাবাড়ি পরিস্কার থাকলে রোগজীবাণু বংশবিস্তার করে না ফলে বাচ্চারা ঘন ঘন রোগে ভুগে না।

৮. আরেক জাতের বাবা মা আছেন যারা বাচ্চাদের ঠিক বা ভুল কোন শিক্ষায় দেন না। নিজেদের মত কাজ করেন, রান্না খাওয়া, সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাচ্চার কি প্রয়োজন সেটা নিয়ে মাথা ঘামান না। পৃথিবীর সাথে বাচ্চার পরিচয় সেভাবে হয় না।

ফলে একই বয়সের অন্য বাচ্চারা যখন অনেক কিছু শিখে যায় তখন বয়স অনুযায়ী এদের বিকাশ হয় না, পিছিয়ে পড়ে। এদের নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরি হয়, সমাজ এদের কোনঠাসা করে রাখে, নিজের অধিকার আদায় করতে ব্যর্থ হয়। ফলে, তুমি কি ললিপপ খাও? কিছু বোঝ না? পৃথিবীতে কি নতুন?- এসব আপত্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যা মোটেও কাম্য নয়।

তবে একটা বিষয় অনেকক্ষণ থেকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, তাই তো? "কেমন বাবা-মা চাই?"- না লিখে " কেমন মা চাই?"- শিরোনাম দিলাম কেন, তাই না?

হুম, আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পরিবারে, বিশেষ করে, বাচ্চাদের ব্যাপারে মায়ের কথায় শেষ কথা এবং বাবার চিন্তাভাবনাকেও মা প্রভাবিত করতে পারেন! যে পরিবারে মা সুশিক্ষিত, সভ্য তাদের বাচ্চারা বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠিত। অনেক নামি-দামি টাকা ওয়ালা অফিসারের বাচ্চাদের দেখেছি নষ্ট হয়ে যেতে, নেশা করে, এখন তিনবেলা খাবারও জুটে না। আমার অভিজ্ঞতা আর কতটুকই !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভালো লিখেছো। বাস্তব ও সত্য কথাগুলো এত অল্প কথায় সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছো।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

      মুছুন