সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

প্রাপ্তবয়স্ক ভূতের গল্প ।। বিডি নিউজ.ইন।। BD News.in


দুপুর নাগাদ সবাই জেনে যায় একটি বস্তাবন্দী পচা লাশ পাওয়া গেছে। দোকানদার রমিজ মিয়াকে খবর দেওয়া হয়।

রমিজ মিয়ার চায়ের দোকান আমাদের বাড়ির কাছেই। আমাদের গ্রামটি পুরোপুরি গ্রাম নয়; আধা শহর, আধা গ্রাম। গ্রামের উত্তর মাথায় আমাদের বাড়ি।বাড়ির পাশে ছোট কালভার্টের একদিকে রমিজ মিয়ার দোকান। তার এই ব্যবসার বয়স ষাটের কাছাকাছি। সেই শুরুর দিন থেকে আজও এখানে বসে চা খেতে খেতে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ জমায় ছেলে-বুড়োরা। প্রতিদিন এই আড্ডার কোনো হেরফের হয় না। প্রায় পাঁচ যুগ ধরে এখানে জমে থাকে দিন, জমা থাকে জীবন। আর এ দোকান নিয়ে রমিজ মিয়ার গর্বও আছে। এখানে দেশের অনেক নেতা, যারা দেশ গড়েছেন, ভেঙেছেন; তারা অনেকেই চা খেয়েছেন। নিজের হাতের দিকে চেয়ে প্রায়ই রমিজ মিয়া আমাদের বলেন, ‘বুঝলা বাবা, এই হাত দিয়া কতজনরে চা বানাইয়া খাওয়াইলাম; এই ধরো শেখসাব, ভাসানীসাব; কারে না খাওয়াইছি!’

কথা কিন্তু সত্য; ষাট বছর কম কথা না। রমিজ মিয়ার বাপ এ দোকান দিয়েছিল। বাপ বুড়ো ছিল তার, আট বছর যখন বয়স; তখন থেকেই বাপের সঙ্গে দোকানে বসত সে। সময় সাধারণকেও অসাধারণ করে। সকাল থেকে রাত অবধি রমিজ মিয়া মানুষটা আসলে আপাদমস্তক এ দোকানটিই। আরও একজন অবশ্য আছে তার সঙ্গে; মা-মরা মেয়ে কুসুম। বয়স এগারো। পাশের স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে।

কুসুম যখন অন্য অকাজে ব্যস্ত না থাকে; অথবা ছেঁড়া কাঁথায় পা ডুবিয়ে পড়তে আর ইচ্ছে করে না ঘরের একমাত্র কক্ষটিতে; তখন বাবার সঙ্গে ইতিহাস নিয়ে গল্প জমায়। বাবা ভূতের গল্প শোনাতে চায়, কুসুম ওসবে বিশ্বাস করে না; স্কুলের স্যার তাকে বলেছে, ভূত বলে কিছু আদতে নাই। বাবাকে পড়ার ফাঁকে কাজেও সাহায্য করে। সেবার রমিজ মিয়া জ্বরে পড়েছিল, এক-দুই দিন নয়; পনেরো দিন। সে কী জ্বর! যেমন তেমন নয়; উঠে দাঁড়ানোই দায়, দোকানে যাবে কীভাবে। দোকান বন্ধের উপক্রম হলো। কুসুম বলল, ‘বাবা, আমি বসব দোকানে।’ টানা দুই সপ্তাহ বিজ্ঞ দোকানি হয়ে সব করল সে। এমনভাবে সামলেছে, মনে হয়েছে এ ব্যবসা কত দিন ধরে সে-ই চালাচ্ছে।

সকালবেলাটা ভারী ভালো লাগে কুসুমের। এই সময়টাতে পাশের মসজিদে কোরআন পড়তে যায় টানা দুই ঘণ্টা। ইমাম হুজুর লোকটা ভালো। রমিজ মিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও দারুণ। কথায় কথায় কুসুমের প্রশংসাও করেন হুজুর। সকালের প্রথম চা-টা রমিজ মিয়া তাই হুজুরকে দিতে ভোলে না।

একদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। কুসুম পড়তে যায়। গিয়ে দেখে ইমাম হুজুর মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছেন। বৃষ্টি আরও বেড়ে যায়। আর কেউ আজ পড়তে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। কুসুম হুজুরকে বলে বাড়ি চলে যাবে কিনা। হুজুর তাকে পড়তে বলে। কুসুম জোরে জোরে পড়তে থাকে।

হুজুর কুসুমকে বলেন, ‘বুঝলা কুসুম, রাত-বিরাতে বের হয়ো না। এমুন ঝড়-বৃষ্টির সময়ে জিন-পরিদের আনাগোনা বাড়ে। তা ছাড়া তুমি তো ঘরে একা।’

কুসুম বলে, ‘না হুজুর, বাবা আমার লগেই থাহে।’

হুজুর বলেন, ‘আরে সেইটা না। মাইয়া মানুষ তো তুমি একা। ভূতে যদি আইসা ধরে, উপায় আছে?’

কুসুম বাধা দিয়ে বলে, ‘কিন্তু বিজ্ঞান স্যার তো কয় ভূত বলে কিছু নাই।’

‘ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন হুজুর। একটু পরে বাতাসের বেগ আরও বাড়ে। কুসুম এবার বাড়ি যেতে চাইলে হুজুর বৃষ্টি দেখিয়ে বললেন, ‘বান কমুক, তারপর যাবা। কুসুম জোরে জোরে পড়তে থাকে। হুজুর তার পাশে আধশোয়া। অদূরে আচমকা বাজ পড়ে কোথাও।

এদিন আর কুসুম বাড়ি যায়নি। পরদিন কুসুমের লাশটি পাওয়া যায় পাড়ার পাশের ডোবায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ