সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চান হাবিব-নাতালিয়া।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের মেয়ে নাতালিয়া নাতাশা। কখনো কি ভেবেছিলেন তার পাতে উঠবে বাংলাদেশের নদ-নদীর মাছ? গায়ে মাখবেন এ দেশের সবুজ-শ্যামলিমার হৃদয় শীতল করা হাওয়া। বৈবাহিক সূত্রে নাতালিয়া এখন বাংলাদেশে। খাচ্ছেন ইলিশ ভাজা। ঘুরছেন কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে অলি-গলি। ভাসছেন শ্বশুরের দেশের মানুষের শুভেচ্ছায়।

নাতালিয়াকে চিনতে এতদিনে কারও বাকি নেই। বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ছেলে হাবিবুর রহমানের স্ত্রী তিনি। তাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব: দ্য মিক্সম্যাচ ফ্যামিলি’ ও ফেসবুক পেজ ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব’ দুজনকে পরিচিত করেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালিদের কাছে। প্রতিদিন এই দম্পতির সাংসারিক খুনসুটি ও মজার মজার ভিডিও দেখছে লাখ লাখ মানুষ।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজলার সন্তান হাবিবুর রহমান পেশায় একজন প্রকৌশলী। ২০১২ সালে জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে মাস্টার্স করার জন্য যান। বর্তমানে তিনি জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সাল্টিং ফার্মে ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আর বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের কাছাকাছি শহর বাবরুস্কের মেয়ে নাতালিয়া রহমান। তিনি পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট।

বায়ার্ন মিউনিখের স্টেডিয়ামে স্টুডেন্ট জব করতে গিয়ে প্রথম পরিচয় হয় নাতালিয়া ও হাবিবের। দেখা থেকে প্রণয়। ২০১৭ সালে ধর্মীয়ভাবে বিয়ের পর আবার ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির নিয়মনীতি মেনে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। বর্তমানে কর্মসূত্রে এই দম্পতি জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সাক্সনি অঙ্গরাজ্যের কেমনিজ শহরে থাকেন। তাদের সংসারে নাদিয়া নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষে শখের বশেই ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব-দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’ নামে ইউটিউব চ্যানেল ও ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন তারা। নিত্যদিনের কাজ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক বার্তামূলক ভিডিও তৈরি করে সেখানে পোস্ট করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাদের অনুসারী বাড়তে থাকে। তাদের নিত্যদিনের খুনসুটির পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতামূলক সব ভিডিও এই পেজ ও চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের কাছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন নাতালিয়া-হাবিব দম্পতি। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো নাতালিয়া স্বামী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছেন আর ভাঙা বাংলায় সবার সঙ্গে কথা বলছেন নাতালিয়া। এ সময় কথা হয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে।

গ্রাম সম্পর্কে অসাধারণ অনুভূতি প্রকাশ করে নাতালিয়া বলেন, ঢাকা শহরে অনেক গাড়ি, অনেক বাড়ি। গাড়ির শব্দে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। গ্রামটা অনেক সুন্দর। এখানে একটা ভালো ঘুম হবে। বাংলাদেশকে ও গ্রামকে ভালোবাসি।

তিনি আরও বলেন, আমাকে পরিবারের সবাই প্রিন্সেসের মতো ট্রিট করছে। সবাই খুব দ্রুত আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমাদের বেলারুশের গ্রামগুলো অনেক ছোট। তাই এভাবে উপভোগ করতে পারি নাই। এখানে সবার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।

নাতালিয়া কাজ করতে চান এদেশের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুদের জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে যাদের শিক্ষার সুযোগ করে দিলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা তাদের জন্য সহজ শিক্ষামূলক ভিডিও বানাব।

নাতাশা রহমানকে দেখতে এসেছেন মো. সেলিম হোসেন নামে এক প্রতিবেশী। তিনি বলেন, হাবিবের বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে। শুনেছি তাদের বাড়িতে বিদেশিনী আসছে। তাই বিদেশি বউকে দেখতে এসেছি। দেখে মনে হয়নি তাদের বাড়ি বিদেশ। আমাদের দেশের মানুষের মতো বাংলায় কথা বলে এবং সবার সঙ্গে মিশছে।

আরেক প্রতিবেশী ছালেহা বেগম বলেন, তার ব্যবহার খুব অমায়িক। আমাদের পাশে বসে কথা বলেছে এবং পরিচিত হয়েছে। আচরণ দেখে আমরা খুব অবাক হয়েছি। মনে হয়েছে যেন দেশের বউ।

হাবিবুর রহমানের বড় ভাই লায়ন আজহার মাহমুদ বলেন, নাতালিয়া বিদেশে মানুষ হলেও আমাদের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে গেছে।আমার ভাই হাবিব তাকে আগে থেকেই সব কিছু শিখিয়ে নিয়েছে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে সহজেই সে মিশে গেছে। এটা খুবই ভালো লাগছে।

বাংলা ভিডিওগুলোর মাধ্যমে স্ত্রী ও মেয়েকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানানোর চেষ্টা করেন বলে জানান হাবিবুর। তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাভাষীরা সেসব ভিডিও দেখে মন্তব্য করেন। এভাবে সবার সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। বেলারুশে গিয়েও তাঁরা ব্লগে লিখেছেন। তাতে অনেকেই বলেছেন, অন্য একটি দেশ সম্পর্কেও তাঁরা জানতে পারলেন।

এদিকে বিদেশি বউয়ের প্রশংসা করে হাবিবুর বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই মাথার চুল পড়া শুরু হয়েছিল। একসময় টাক সমস্যা প্রকট হয়। এই টাক নিয়ে চিন্তা করতাম। টাক ঢেকে রাখার চেষ্টা করতাম। নাতালিয়ার সঙ্গে বিয়ের পর নিজেই সে আমার মাথায় বাকি যেটুকু চুল ছিল, তা ফেলে দেয়। বলে এটা কোনো সমস্যা না। আত্মবিশ্বাসটাই বড় কথা। তারপর থেকে ন্যাড়া মাথা নিয়ে চলছি, টাক নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হয়নি আমাকে।’

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ