সর্বশেষ খবর

10/recent/ticker-posts

‘ডাক্তার জনি আমার মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর জন্য দায়ী’, এক মায়ের আর্তনাদ।।BDNews.in


বিডি নিউজ ডেস্কঃ চিকিৎসকের ভুলে ফাতেমা তুজ্জোহরা (২৫) নামের এক নারী ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযু্ক্ত চিকিৎসকের নাম মুস্তাকিন বিল্লাহ জনি, যিনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সার্জন হিসেবে অপারেশন করে থাকেন।

ফাতেমা শাহজাদপুর পৌর শহরের দ্বারিয়াপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত আলমাছ সরকারের মেয়ে ও এনামুল হক মাসুদের স্ত্রী। তার মানহা নামের ২ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের পেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে ফাতেমার মা মোছা: রুমী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘ডাক্তার জনি সিজার করার সময় ভুল চিকিৎসা দেওয়ায় আমার মেয়ে ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।’

এসময় রুমী খাতুনের কোলে ফাতেমার ২ বছর বয়সী অবুঝ মানহা নানীর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

মৃত ফাতেমার স্বামী এনামুল হক মাসুদ জানায়, গত ২৬ নভেম্বর আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে স্থানীয় ডাকবাংলো পাড়ায় অবস্থিত পপুলার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কোন চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার আসবেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করতে করতে রাত ২টায় সিজারের জন্য আমার স্ত্রী ফাতেমাকে নিয়ে যায়। এসময় ডা. মুস্তাকিন বিল্লাহ জনিকে দিয়ে তারা সিজার করান।

সিজারের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক। দ্রুত তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাদের কথামতো সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানায় সিজারের সময় বাচ্চার মাথায় আঘাত লাগার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার বাচ্চাটা ৫ দিন পর মারা যায়।

অপরদিকে ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর আমার স্ত্রী ফাতেমা পেটে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাতে থাকে ও তার অস্বাভাবিকভাবে রক্তপাত শুরু হয়। তৎক্ষনাত আবারও তাকে পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে রাত ১১টার দিকে ডাক্তার জনি এসে পরিক্ষা করে জানান ফাতেমার জরায়ু ফুলে যাওয়ার কারণে রক্তপাত হচ্ছে।

ওই অবস্থায় সারারাত ফাতেমা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে এবং তার অনবরত রক্তপাত হতে থাকে। এসময় ডাক্তার জনির কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বরং তিনি ফোনে নার্সদের জানিয়েছিল ফাতেমাকে যেন ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়।

মৃত ফাতেমার চাচা আলহাজ্ব সরকার জানান, সারারাত কোন চিকিৎসা না পেয়ে আমরা হাসপাতাল ছাড়ার কথা জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফাতেমার পরিক্ষা নিরীক্ষার সকল কাগজপত্র রেখে বন্ডে সই নিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফাতেমাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায় সিজারের সময় ফাতেমার পেটে গর্ভফুল রেখে চিকিৎসক সেলাই করায় রক্তপাত ও প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, এ কারণে রোগীর কিডনীতে প্রভাব পড়েছে। সেখানে ফাতেমার অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসক ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

ফাতেমাকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতাল ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২ হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসকরা পরিক্ষা করে জানিয়েছে ফাতেমার জরায়ুতে গর্ভফুল রেখে সেলাই করার ফলে রক্তপাত হয়েছিল এবং সেই রক্তপাত ও পরে খিচুনীর কারণে তার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। এখানে সে প্রায় ১ মাস চিকিৎসাধীন ছিল।

পরে ফাতেমার অবস্থার আরও অবনতি হলে আইসিইউ’র জন্য আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ না পেয়ে গত ২৩ জানুয়ারি ফাতেমা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

ফাতেমার মা, স্বামী ও পরিবারের লোকজন ডাক্তার জনির বিচার চেয়ে বলেন, এই ডাক্তারের জন্য কোন মা যেন সন্তান হারা না হয়, কোন সন্তান যেন মাতৃহারা না হয়, কোন মানুষই যেন আর অপচিকিৎসা ও ভুল চিকিৎসায় মারা না যায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ফাতেমার পরিক্ষার রিপোর্ট বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখালে তারা জানান, এখানে উল্লেখ রয়েছে “গর্ভধারণের ধারণকৃত পণ্যসহ ভারি জরায়ু” (Bulky Uterus with Retained products of Conception)। এতে বোঝা যায় যে জরায়ুতে গর্ভফুল জাতীয় কিছু রেখে সেলাই করা হয়েছিল। আরেক জায়গায় উল্লেখ আছে “Secendary PPH Shock Souduring lues“ যার অর্থ তারা বলেন- সিজারজনিত রক্তক্ষরণের কারণে ইনফেকশন হয়ে কিডনিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে বা কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমাকে সিজার করা চিকিৎসক ডা. মুস্তাকিন বিল্লা জনি বলেন, সিজারের জন্য কোন জটিলতা তৈরি হয়নি। রোগী তার সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে পারেনি ও তার প্রি একলামশিয়া ছিল তাই এরকম হয়েছিল। রোগীকে পুপুলার হাসপাতালে রেখে আমরা যদি চিকিৎসা দিতাম তাহলে তার অবস্থা খারাপ হত না।

গর্ভধারণের উপাদান পরিক্ষায় পাওয়া গেছে জানালে তিনি বলেন, উপাদান থাকবেই। তাছাড়া পরবর্তীতে যারা ফাতেমার চিকিৎসা করেছেন তারা ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন বলেই ফাতেমার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়, এবং মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা/মীম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ