কেন এই স্খলন তাদের? এর একটিই উত্তর, কারণ তারা কেউই সত্যিকার সহমর্মী বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। সত্যিকার সহমর্মী বা শুভাকাঙ্ক্ষীকে অপপ্রচার কখনও বিভ্রান্ত করে না। সত্যিকার বন্ধুরা আমার উদারতাকে আমার পতন ভেবে উল্লসিত হয় না। আমার সরলতাকে জটিল কুটিল কিছু আখ্যা দিয়ে ঘৃণা ছোড়ে না। তথ্য-না-জানাকে তঞ্চকতা বলে উপহাস করে না।
চার দশকের বেশি হলো নিজের আদর্শকে এক বিন্দু বিসর্জন না দিয়ে কণ্টকাকীর্ণ পথে হেঁটে চলেছি। দুঃসময়কে কাঁধে নিয়েই একা একা চলছি আজও। যত দূর যাই, তত রক্তাক্ত হই, তত একা হই। তারপরও এই একা আমাকে কাবু করতে, আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করতে, অহেতুক কৈফিয়ত চাইতে, আমাকে কাদায় ডুবিয়ে দিতে পাল পাল লোক পথে প্রান্তরে এক পায়ে খাঁড়া। এ আমার চেয়ে কে বেশি জানে আর!
মাদ্রাসায়, মসজিদে, ওয়াজে, অফিসে, আদালতে, রাস্তায়, ঘাটে, ট্রেনে, বাসে, মাঠে, ময়দানে আমার চরিত্রের এক বিন্দু কিছু না জেনে যুগের পর যুগ চমৎকার চরিত্রবানেরা নিরন্তর আমার চরিত্র হনন করেই চলেছে। জগতে আমি বোধহয় একটিই মানুষ, যাকে অনায়াসে ব্রাত্য করা যায়, অপমান আর অপদস্থ করা যায়, যার সততার দিকে কালিমা ছুড়ে দেওয়া যায়, যার দুর্নাম করলে, যাকে পায়ের তলায় পিষে ফেললে কেউ মনে করে না কোনও অন্যায় হচ্ছে।
যারা আমাকে নিয়ত পোড়ায়, তারা আমাকে অঙ্গার করতে পারেনি। আমি পুড়ে পুড়ে ইস্পাত হয়েছি। কোনও বেদনাই আমাকে বিধ্বস্ত করতে পারেনি। আসলে, হারাতে হারাতে আমি হারিয়েছি হারাবার সব বেদনাকে।
(তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পোস্ট)
ঢাকা/মীম
0 মন্তব্যসমূহ